স্থাপত্য ও কবিতার ভাষা মিশে গেছে রবিউল হুসাইনের কাছে
রবিউল হুসাইন ছিলেন অনেকেরই প্রিয় ‘রবিদা’। কবি, স্থাপত্যবিদ রবিউল হুসাইন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। যাঁর কাছ থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেয়েছে বিনির্মাণের প্রেরণা। প্রয়াত রবিউল হুসাইন স্মরণে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে উঠে আসে এসব কথা।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণে রবিউল হুসাইন’। ২৬ নভেম্বর রবিউল হুসাইনের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে আজ আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি খন্দকার সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, সহনশীলতা ও প্রয়োজনে কঠোর হওয়া—এই দ্বৈত সত্তা বাঙালির প্রবল। আর সেটাই বহন করতেন রবিউল হুসাইন। একদিকে স্থপতি, অন্যদিকে তিনি কবি। কলম ও বন্দুক একসঙ্গে ধরতে জানার কৌশল জানতেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যের পর একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ২০১৯ সালে প্রয়াত রবিউল হুসাইনের জীবনের নানা ঘটনা এবং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁর অবদানের কথা।
রবিউল হুসাইনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর বলেন, তাঁর মতো মানুষ আর দ্বিতীয়জন নেই। শব্দের ছন্দে প্রতিবাদ, স্থাপত্যের কৌশল অথবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবকিছুতেই তাঁর উপস্থিতি আপাদমস্তক এক উদার মানুষ হিসেবে। তিনি আরও বলেন, রবিউল হুসাইন এমন এক মানুষ, যাঁর কাছে ছিল সবার অধিকার।
পরে রবিউল হুসাইনের লেখা কয়েকটি ছোট কবিতা পাঠ করে শোনান আসাদুজ্জামান নূর।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী পড়েন মূল প্রবন্ধ। তিনি বলেন, কিছু মানুষ সময়ের ঊর্ধ্বে উঠে জীবন যাপন করতে পারেন, রবিউল হুসাইন তেমনই একজন। তিনি বলেন, ঠিকানাহীন জায়গায় হারিয়ে গেলে বিনির্মাণ করতে হয়। স্থাপত্য মানে বিনির্মাণ। কবিতাও সেটাই। আর এ কথাটি মনে করিয়ে দেওয়ার মানুষটি ছিলেন রবিউল হুসাইন।
আলী নকী বলেন, যে স্বপ্ন দেখলে সময়ের সঙ্গে প্রগতিশীল হওয়ার প্রেরণা পাওয়া যায়, সেই স্বপ্ন দেখা মানুষ ছিলেন তিনি। রবিউল হুসাইনের কাছে গিয়ে মিলেমিশে যায় স্থাপত্য ও কবিতার ভাষা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যজন ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের।
সমাপনী বক্তব্যে গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের যৌথ আয়োজন এই স্মরণসভা। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করেছিলেন রবিউল হুসাইন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে জায়গা নির্ণয় থেকে নকশা প্রণয়নে স্থপতিদের ভূমিকা কতটা প্রয়োজনীয় ছিল, সে কথার উল্লেখ করেন তিনি।
২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর মারা যান রবিউল হুসাইন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া এ কবির স্মরণে আজ সকালে মিরপুর বধ্যভূমির জল্লাদখানায় স্মৃতিপিঠ পরিদর্শন করে মফিদুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধিদল।
আজ বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত স্থপতি ইনস্টিটিউটে শুরু হয়েছে ‘না’–এর প্রদর্শনী। ষাটের দশকে ‘না’ পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয় রবিউল হুসাইন, তাজু চৌধুরী, রশীদ চৌধুরী ও কাজী সাহিদ হাসানের যৌথ উদ্যোগে।
সারা যাকের বলেন, ‘না’ ছিল অচলায়তন ভাঙার এক প্রকাশ। আজ বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।