ঢাকা পলিটেকনিকে ঝোলানো হলো ২২টি তালা, লেখা ৬ দফা

ফটকে তালা ঝুলিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ২৯ এপ্রিলছবি: প্রথম আলো

ছয় দফা দাবিতে সারা দেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ভবনের ফটক ও কক্ষের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। তার আগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কার্যালয়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, ইনস্টিটিউটের সাউথ ও নর্থ করিডরের ফটক আর কক্ষের দরজাসহ মোট ২২টি তালা ঝোলানো হয়েছে।

কারিগির শিক্ষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আনিল মাশরাফি জানান, তাঁরা সব মিলে ২২টি তালা ঝুলিয়েছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের বাইরে মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা দলে দলে অবস্থান করছিলেন। নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন তাঁরা।

একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ১১৩ নম্বর কক্ষটি অধ্যক্ষের। কক্ষের দরজায় তিনটি তালা ঝোলানো রয়েছে। একটির সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা ঝুলছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তালাটি তাঁরা ঝুলিয়েছেন।

ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো তালা সিল করে দেওয়ার মতো সাদা স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। এর ওপরে মার্কার দিয়ে লেখা হয়েছে ‘৬ দফা’। তার ওপরে ছোট সাদা কাগজে লেখা, ‘কারিগরি সেক্টরের সংস্কার কাজ চলমান। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’

আরও পড়ুন

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরুর পর কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম জরুরি সংবাদ সম্মেলন বলেন, সাত মাস ধরে তুলনামূলক শিথিল কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চলেছে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বিভাগ থেকে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। দাবি বাস্তবায়ন না করে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরপর গত ১৬ এপ্রিল চূড়ান্ত কর্মসূচি হিসেবে সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়। আবারও বৈঠকে ডাকা হয়। শিক্ষার্থীরা ওই বৈঠকে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ, যাঁদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সেসব দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

মাশফিক ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি বাস্তবায়নে কারিগরি মাদ্রাসা বিভাগ রূপরেখা বাস্তবায়নে একটি কমিটি করে দিলেও, এখন পর্যন্ত কমিটির একটি মাত্র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কোনো সফলতা দেখছি না। আমাদের দাবি ও দফাগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কীভাবে কাজ করা হবে—এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমরা পাচ্ছি না। তাই সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছি। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’

দরজায় ঝোলানো তালার ওপর ছোট সাদা কাগজে ‘ছয় দফা’ লিখে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ২৯ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

পরে কর্মসূচির বিষয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের আরেক প্রতিনিধি শাহজাদা আহমেদ বলেন, আমরা অবরোধ বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচিতে যাব না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে শাটডাউন কর্মসূচি চলবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন রূপরেখার একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন