ইমেরিটাস অধ্যাপক হয়ে হাশেম খান-রফিকুন নবী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানিত করেছেন

দুই বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান (ডানে) ও রফিকুন নবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হওয়ায় তাঁদের সংবর্ধনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: খালেদ সরকার

দেশের দুই বরেণ্য শিল্পী। তাঁদের একজন অনিন্দ্যসুন্দর ছবিতে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবইগুলোকে আকর্ষণীয় ও আনন্দময় করে তুলেছেন। তিনি হাশেম খান। অন্যজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে ‘টোকাই’ নামে এমন এক চরিত্রকে উপস্থাপন করেছেন, যা কালজয়ী হয়ে উঠছে। রফিকুন নবী, যিনি রনবী নামেই সর্বজন সমাদৃত। নন্দিত এই দুই শিল্পী ও শিল্পকলার শিক্ষককে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানিত করেছে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।

আজ সোমবার তাঁদের এই সম্মানপ্রাপ্তিতে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। অনুষ্ঠানে বলা হলো, তাঁদের এই সম্মাননাপ্রাপ্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই সম্মানিত করেছে।

বৃষ্টিভেজা বিকেলে চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উষ্ণ আয়োজনে দুই শিল্পীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, দেশেই এই দুই বরেণ্য শিল্পীকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই সম্মানিত হয়েছে। তিনি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তাঁরা জীবনব্যাপী শিল্পসাধনা ও শিক্ষকতায় দেশের শিল্পকলাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি বহু কৃতী ছাত্র–শিল্পী তৈরিতে অবদান রেখেছেন। তাঁরা দুজন দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে যেমন বিপুল পরিচিত ও সম্মানিত, তাতে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে তাঁদের মনোনীত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো দ্বিধা-সংকটে পড়তে হয়নি। তাঁরা মূল্যবান অভিজ্ঞতা, পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উপাচার্য তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সংবর্ধনা আয়োজনের জন্য চারুকলা অনুষদকে ধন্যবাদ জানান।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুই বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান ও রফিকুন নবীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: খালেদ সরকার

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে উপাচার্য প্রাচ্যকলা বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান এবং অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন। তাঁদের দুজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ ও সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল।

সংবর্ধনার প্রতিক্রিয়ায় হাশেম খান বলেন, এই সম্মান একা তাঁর নয়, চারুকলার শিক্ষক-শিল্পী, শিক্ষার্থী সবারই। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে এই চারুকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে যুক্ত হয়। এখন অনুষদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমগ্র শিক্ষা কার্যক্রমে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। শিল্পশিক্ষা ও দেশের সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে শিল্পীরা যে ভূমিকা রাখছেন, সেখানে এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা ভবিষ্যতে চারুশিল্পীদের অনুপ্রাণিত করবে।

রফিকুন নবী বলেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক হবেন, এটা কখনো তাঁর ভাবনাতেই ছিল না। তবে এর ফলে অবসর গ্রহণের পরে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো। সাধ্যমতো এই সুযোগটি তিনি কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেন, এ দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই সূত্রে চারুকলা কলেজে ছাত্র ও পরে অনুষদে শিক্ষকতার সুবাদে তাঁর নিজেরও সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব হিসেবে অনেক শিক্ষার্থীকে শিল্পশিক্ষা দিয়েছেন, যাঁরা পরবর্তী সময়ে কৃতী শিক্ষক বা শিল্পী হিসেবে দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। এগুলোই তাঁর ভালো লাগার বিষয়।

শিল্পী হাশেম খান (ডানে) ও রফিকুন নবীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। ঢাকা, ৭ আগস্ট
ছবি: খালেদ সরকার

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া। চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমা হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পালা। অঙ্কন ও চিত্রায়ণ, গ্রাফিক ডিজাইন, মৃৎশিল্প, প্রাচ্যকলা, ভাস্কর্য, শিল্পকলার ইতিহাস, ছাপচিত্র ও কারুশিল্প বিভাগের চেয়ারম্যান এবং শিক্ষকেরা এবং আর্ট বাংলা ফাউন্ডেশন, গ্যালারি চিত্রক, সফিউদ্দিন শিল্পালয় এবং অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের প্রাক্তনীরা ইমেরিটাস অধ্যাপক দুজনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।