ঢাবিতে যুবককে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবককে থামিয়ে মারধর করা এবং তাঁর মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ও ১৭ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে মারধর ও ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন প্রজিত দাস (২৮) নামের ভুক্তভোগী এক যুবক। ওই রাতেই রাজধানীর শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
প্রজিত দাসের গ্রামের বাড়ি নড়াইলে। ঢাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ছাত্র তুষার হোসেন ও শামীমুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁকে মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তুষার ও শামীমুল ওই হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র।
লিখিত অভিযোগে প্রজিত বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে করে পলাশী থেকে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলাম। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে পৌঁছাতেই তুষার, শামীমুলসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জন আমার মোটরসাইকেল থামান। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তাঁরা আমাকে অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে আমি প্রতিবাদ করি। তখন তুষার ও শামীমুলের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা আমাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে আমার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। তাঁদের থাপ্পড়ে আমার কানের পর্দা ফেটে যায়।’
অভিযোগে প্রজিত আরও বলেন, ‘মারধরের পর তুষার, শামীমুল ও তাঁদের সহযোগীরা আমার মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ও সঙ্গে থাকা ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে আমাকে সূর্য সেন হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে আবার মারধর করেন। এরপর তাঁরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে হলের ফটকে বের করে দিয়ে বলেন, তুই সোজা চলে যাবি, ডানে-বাঁয়ে কোথাও তাকাবি না। তাঁরা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। খবর পেয়ে আমার পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র (দুজনই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা) এসে আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান।
প্রজিতের অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক সাইফ উদ্দিনকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, মামলার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে তা করা হবে।
তুষার হোসেন ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সূর্য সেন হল সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ও শামীমুল দুজনই বর্তমানে এ হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হয়েছিল। তিনি আমাকে হল থেকে ডেকে নিতে প্রজিতকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু প্রজিত তাঁর কথা বুঝতে পারেনি। সে ভেবেছে, ওই বড় ভাই আমাকে তুলে নিয়ে যেতে বলেছেন। যখন সে সূর্য সেন হলে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, তখন আমাদের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়েছে। ঘটনা এটুকুই। মারধর বা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অন্যদিকে শামীমুল ইসলামের ভাষ্য, এক নেতার নির্দেশে প্রজিত দাস তুষার হোসেনকে সূর্য সেন হল থেকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। তখন তিনিসহ হলের শিক্ষার্থীরা মিলে তা প্রতিরোধ করেছেন। মারধর বা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।