ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর: ৭ ট্রাক বর্জ্য সরানোয় ঝকঝকে ধানমন্ডি লেক

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফর ঘিরে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হয় ধানমন্ডি লেক
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

লেকের বিভিন্ন অংশে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা। লেকের পাড়ে ও পানিতেও থাকে খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, কাপ ও পলিথিনের ব্যাগসহ বিভিন্ন বর্জ্য। লেকের বিভিন্ন অংশের রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত জায়গার বাইরে পেতে রাখা হয় চেয়ার-টেবিল। ময়লা-আবর্জনা আর যত্রতত্র চেয়ার-টেবিলের কারণে থাকে না হাঁটার পরিবেশ। ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বা বেড়াতে গেলে সাধারণত এমন সব দৃশ্যই চোখে পড়ে। ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র উন্মুক্ত এই জায়গার এমন দশাই ছিল এত দিন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরে ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে হঠাৎ করেই বদলে গেছে রাজধানীর এই লেকের চিত্র। লেকটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকটিকে ঘষেমেজে ঝকঝকে করা হয়েছে। এ কাজ করতে টানা দুই দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রায় ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেছেন।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডি লেক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো লেক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। অনেকটাই ঝকঝকে-তকতকে অবস্থা। লেকের ভেতর ঘাসে বা মাটিতে, কোথাও পড়ে নেই ময়লা-আবর্জনা, এমনটি গাছের ঝরা পাতাও। যেন অনেকটাই গ্রামের বাড়ির উঠান। লেকের পাড়ে ও পানিতেও নেই কোনো আবর্জনা, পানিও পরিষ্কার। লেকের বিভিন্ন জায়গা থাকা রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ। শুধু লেকটির রবীন্দ্রসরোবর অংশে থাকা কয়েকটি দোকান দেখা গেল। সেখানেও চেয়ার পাতা হয়েছে সীমিত।

ধানমন্ডি লেকে ঘুরে আজ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন লোকজন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

লেকের হাঁটার রাস্তায়ও অনেক জায়গায় সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রসরোবরের মঞ্চের খুঁটিগুলোতে দেওয়া হয়েছে রং। কিছু দূর পরপর হাঁটাপথের দুপাশে থাকা প্লাস্টিকের ময়লা ফেলার বিনগুলোও পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে যেন অন্য এক ধানমন্ডি লেক।

ধানমন্ডির বাসিন্দা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আজ অন্য রকম এক ধানমন্ডি লেক দেখতে পেলাম। হাঁটতে এসে মনটাই ভালো হয়ে গেল। কত বছর পর এমন ধানমন্ডি লেকের দেখা পেলাম!’ তিনি আরও বলেন, আজ যেভাবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিদিনই এই লেকটিকে এমনভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টোটা।

ধানমন্ডি লেকের হাঁটার রাস্তাগুলো হয়েছে ঝকঝকে–তকতকে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ধানমন্ডির বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন, গত শনি ও রোববার দুদিন ধানমন্ডি লেকে অনেক কাজ করতে দেখেছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ঘষেমেজে রীতিমতো নতুন করে ফেলেছেন। এমনকি মশা মারতেও ওষুধ ও ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা জানান, একটি দেশের একজন রাষ্ট্রপ্রধান ধানমন্ডি লেকে হাঁটবেন, কিছুটা সময় কাটাবেন। এ কারণে সিটি করপোরেশন লেকটিকে পরিচ্ছন্ন করার কাজটি করেছে। বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে যাতে দেশের মানমর্যাদা থাকে, সে জন্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুই দিন ধানমন্ডি লেকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়েছেন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ধানমন্ডি লেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের হাঁটার কথা ছিল। এ কারণে পুরো এলাকা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০ কর্মী এর পেছনে কাজ করেছেন।

ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘লেকটির বিশ্রী অবস্থা ছিল। প্রায় সাত ট্রাক আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া রং করা, রাস্তা সংস্কার করা এবং অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে।’