প্রথমবারের মতো রক্তে সিসার মাত্রা পরীক্ষাসহ শুরু হচ্ছে মিকস্‌ জরিপ

মিকস্‌ জরিপের সপ্তম রাউন্ড শুরু উপলক্ষে বিবিএস মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিরাছবি: ইউনিসেফের সৌজন্যে

দেশের নারী ও শিশুর তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের বহুনির্দেশক গুচ্ছ জরিপ (মাল্টিপল ইন্ডিকেট ক্লাস্টার সার্ভে–মিকস্‌) সপ্তম রাউন্ড শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের জরিপে প্রথমবারের মতো রক্তে সিসা, ভারী ধাতু ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের মাত্রা এবং রক্তশূন্যতা পরীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জরিপে নতুন ৫৬টি সূচকসহ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে মোট ২০০টি সূচকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। মিকস্‌ ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে সূচক ছিল ১৪৪টি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, মিকস্ হলো একধরনের পারিবারিক জরিপ। এ জরিপ থেকে নারী ও শিশু সম্পর্কে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত নারী ও শিশু উপযোগী নীতিমালা তৈরি, পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি নিতে সহায়তা করে। এবার মিকস্‌ জরিপে প্রথমবারের মতো নারী ও শিশুর রক্ত পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে সিসা, ভারী ধাতু ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের মাত্রা ও রক্তশূন্যতার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। চারপাশে সিসাসহ ভারী উপাদানের উপস্থিতি শিশুর স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ঝুঁকি সময়মতো নির্ণয় ও মোকাবিলার মাধ্যমে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়।

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মিকস্ জরিপ প্রথম শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। জরিপটি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৪ সালে। এবার ৬৮ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হবে। নতুন অর্থবছর (জুন–জুলাই) থেকে জরিপ শুরু হবে। মাঠপর্যায়ে চার মাসে উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। শুধু উপাত্ত সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। পুরো জরিপের ব্যয় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে জরিপ পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জনসংখ্যা ও তাদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, একটি দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নে ভূমিকা পালন করে পরিসংখ্যান। তাই মিকস্‌ জরিপ পরিচালনায় তথ্য সংগ্রহের কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। তিনি বলেন, তথ্যের গরমিল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য যেন মাঠপর্যায় থেকে না আসে, সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে। তথ্যের বিভ্রান্তি হলে এই জরিপ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, একটি জরিপ থেকে সব তথ্য তুলে আনার সক্ষমতা কোনো দেশেই তৈরি হয়নি। মিকস্‌ জরিপে রক্ত পরীক্ষার মতো সক্ষমতা তৈরি করা গেছে, এটা অনেক বড় বিষয়।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এই জরিপের তথ্য সহায়তা করছে। কারণ উপাত্ত ছাড়া কোনো পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব নয়। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের বড় অগ্রগতি রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে মিকস্‌ জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসডিজিতে সূচক রয়েছে ২৩১টি। এর মধ্যে ১১৫টির তথ্য তৈরি করেছে মিকস্।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক মোহাম্মদ ওবায়দুল ইসলাম। জরিপ নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালক মো. মাসুদ আলম। উন্মুক্ত পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) দীপংকর রায়।