বাড়ির সামনের রাস্তা–ফুটপাতে অবৈধ দোকান, বিপাকে বাসিন্দারা

বাড়িগুলোর দেয়ালকে পেছনে রেখে বসানো হয়েছে দোকান। এতে অতিষ্ঠ এসব ভবনের বাসিন্দারা। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের চিত্রছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাবর রোডের বি-ব্লকের ১৩/১৫ নম্বর বাড়ি। বাড়িটির প্রবেশপথের দুই পাশে দেয়াল ঘেঁষে বসানো হয়েছে মুদিপণ্য, সবজি, মৌসুমি ফল ও মসলাজাতীয় পণ্য বিক্রির পাঁচটি দোকান। অবৈধ এসব দোকানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ফুটপাত। পরিস্থিতি এমন যে শুধু বাড়ির ফটকের অংশটুকুই এখন দখল হতে বাকি।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির সামনের ফটকের জায়গাটুকু বাদে সব জায়গা দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। এই সড়কের অন্য বাড়িগুলোর সামনেও একই অবস্থা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে একাধিকবার গেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ১৩/১৫ নম্বর বাড়ি থেকে পূর্ব দিকে আরও প্রায় ২০০ মিটার ধরে রাস্তার প্রতিটি বাড়ির সামনেই এমন অবৈধ দোকান রয়েছে। পাশেই আরেকটি রাস্তাও (মেট্রোপলিটন হাউজিং পেছনে) এভাবে দখল করা হয়েছে। দেড় শ মিটার দীর্ঘ ওই রাস্তার দুই পাশে বসানো হয়েছে সারি সারি দোকান। রাস্তা দুটি ও ফুটপাতজুড়ে এমন শতাধিক অবৈধ দোকান রয়েছে।

বাবর রোডের এই এলাকাটি ‘জেনেভা ক্যাম্প’ এলাকার পাশে। অবৈধ দোকানগুলোর কোনোটি ভ্রাম্যমাণ, কোনোটি টিনের বেড়া বা ইটের গাঁথুনি দিয়ে বানানো। তবে দোকানগুলোর মেঝেতে সিটি করপোরেশনের ফুটপাতে বসানো টাইলস এখনো দৃশ্যমান। বেশির ভাগ দোকানের পেছনে দেয়াল নেই। বাসাবাড়ির সীমানার দেয়ালকেই দোকানের দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করছেন দোকানিরা।

বাড়ির সামনের খালি জায়গা, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে এমন অবৈধ দোকান বসিয়ে ব্যবসা করায় ওই এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দখলের কারণে বাড়ির সামনের জায়গা, ফুটপাত ও রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে। বাজারে গরু-মুরগি জবাই করে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। দখলের কারণে রাস্তায় দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। প্রায়ই বিভিন্ন উপলক্ষে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হয়। রাস্তায় রান্নাবান্না ও খাবারের আয়োজনও করা হয়।

কোনো কোনো বাড়ির ফটকের সামনের জায়গাটুকুই শুধু ফাঁক আছে। আর সবটা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

অবৈধ দখলের বিষয়টি জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে গত ৮ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এর আগে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবৈধ দখল উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাবর রোড এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩০ বছর চলা ওই বাজার স্থানীয় লোকজন নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে তিনি বা তাঁর লোকজন জড়িত না। অনেকবার নোটিশ দিয়ে বাজার বন্ধ করে অবৈধ দখলদার উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার এসে বসে যায়। ভুক্তভোগীরা কোনো দিন তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে যাননি।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, মোহাম্মদপুর দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি ও ক্যাম্পের বাজার টোল মার্কেটের নেতারা মিলে এসব অবৈধ দোকানপাট বসাচ্ছেন। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন বিদ্যুৎ, পানি ও নিরাপত্তা প্রহরীর বিল এবং দোকানভাড়া তোলা হচ্ছে। প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও এখান থেকে অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন।

এভাবে ভবনসংলগ্ন জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান বসানোয় অতিষ্ঠ ওই এলাকার বাসিন্দারা এর প্রতিকার চান। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির টোল মার্কেটের সভাপতি রহমত উল্লাহ ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে ২৬২টি দোকানের জন্য যে টোল মার্কেট দেওয়া হয়েছে, সেটা (জেনেভা) ক্যাম্পের ভেতরেই। এর বাইরে রাস্তায় (বাবর রোডে) যে দোকানগুলো আছে, সেটা আমাদের জানা নেই।’ অবৈধ ওই দোকানগুলো টোল মার্কেটের মধ্যে না বলেও দাবি করেন তিনি।

বাবর রোডের ওই দুটি রাস্তার পাশে থাকা বাড়িগুলোর ভুক্তভোগী বাসিন্দারা মিলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে একটি কমিটি করেছেন। ওই কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিহারিদের সামনে রেখে ও তাঁদের ব্যবহার করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধ দোকানগুলো পরিচালনা করছেন, চাঁদা নিচ্ছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দ্রুত ওই জায়গার ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।