পয়োবর্জ্য লেকে ফেললে মাথা গরম করে দেব: মেয়র আতিক

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার ভবনমালিক ও বাসিন্দাদের লেকে ও পানিনিষ্কাশন নালায় পয়োবর্জ্য ফেলা প্রসঙ্গে হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নিজেরা এসির ভেতর বসে থাকবেন আর পুরো শহর নোংরা করবেন, এটি হতে দেওয়া যাবে না।

আপনি ঠান্ডার মধ্যে থাকবেন, খুবই ভালো কথা। কিন্তু পয়োবর্জ্য যদি লেকে ফেলে দেন, আপনি ঠান্ডায় আরামে থাকতে পারবেন না। আপনার মাথা গরম করে দেব আমরা। কারণ, আপনি আমাদের খালের মধ্যে পয়োবর্জ্যের সংযোগ দেবেন আর ঘরে এসির ভেতর থাকবেন, সেটা হতে দেওয়া হবে না।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে ডিএনসিসির নগর ভবনে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিনিময় সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম এভাবেই হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকার সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দূষণমুক্ত খাল ও শহর দেখতে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘অবৈধভাবে লেকে ও পানিনিষ্কাশন নালায় পয়োবর্জ্যের সংযোগ দিয়ে যারা ভাবছে, দেখি না কী হয়। ওই দেখার দিন কিন্তু পার হয়ে গেছে। আমরা আর দেখব না। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পয়োবর্জ্য শোধন না করেই খালে, লেকে কিংবা জলাশয়ে নিষ্কাশনের সংযোগ পাওয়া গেলে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটি পরিষ্কার বার্তা।’

মেয়র আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি খাল ও লেক পরিষ্কার করব আর সেখানে মাছের চাষের বদলে মশার চাষ হবে। দোষ দেবে কাউন্সিলরদের, দোষ দেবে সিটি করপোরেশনকে, সেটি হতে দেওয়া হবে না। খাল, লেক আর জলাশয়—যা–ই হোক, সেখানে মাছের চাষই হবে। যেগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো এখন দূষণমুক্ত করতে হবে।’

নিজের বাসাতেও শোধনাগার বসানোর উদাহরণ দিয়ে মেয়র বলেন, ‘একজন মেয়র হিসেবে আমি দেখেছি, আমার বাসার পয়োবর্জ্য কোথায় যায়? দেখলাম, নিজেরটাও পানিনিষ্কাশন নালার সঙ্গে যুক্ত। তখন চিন্তা করলাম, সমাধান কী আছে? তখন ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় মাটির নিচে একটি শোধনাগার স্থাপন করি। শোধনের পর যে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে, সেটা পানযোগ্য না হলেও অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়। এখন আমার বাসায় পয়োবর্জ্য শোধনের পরই নিষ্কাশিত হচ্ছে।’

শোধনাগার বসাতে মনের ইচ্ছার প্রয়োজন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমার বাসায়ও জায়গা ছিল না। বাসা আট কাঠা জায়গায়। তবে শোধনাগার বসানো হয়েছে একটি গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গায়। শুধু একটি গাড়িকে প্রায় ২০ দিন বাইরে রাখতে হয়েছিল। জায়গা কিন্তু খুব বেশি লাগে না। জায়গা লাগে মনের ইচ্ছায়। মনের ইচ্ছায় জায়গা দিলেই সব সম্ভব।’

বাসায় নিজেরা শোধনাগার স্থাপন করলে ওয়াসাকে পয়োনিষ্কাশনের বিল দিতে হবে না জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘নিজেরা যদি শোধনাগার বসান, তাহলে ওয়াসাকে আর টাকা দেওয়া লাগবে না। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা শোধনাগার বসানোর কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নয়তো অনলাইনে দেখেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পাবেন, যারা শোধনাগার স্থাপনের কাজ করে।’

সোসাইটির প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব ভবনের মালিকদের জানিয়ে দেন। যেন তারা দ্রুত শোধনাগার স্থাপন করে। সরকার কবে দাসেরকান্দি করবে, কবে আরও বিভিন্ন জায়গায় করবে, আমরা কেন সরকারের ওপর নির্ভর করব। কেন নিজেরা করতে পারব না। নিজেরা নলকূপ, জেনারেটর, শীতাতপনিয়ন্ত্রণের যন্ত্র বসাতে পারলে কেন শোধনাগার বসাতে পারব না?’

অভিজাত এলাকাতেই পয়োনালার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে কাজ শুরু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, লেকে ও পানিনিষ্কাশনের নালায় অবৈধভাবে দেওয়া সংযোগের সন্ধান করে তালিকা করা হচ্ছে। যাঁরা সেপটিক ট্যাংকের নকশা করেছেন শুধু দেখানোর জন্য, কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি, সেটা হবে না। সেপটিক ট্যাংকের ব্যত্যয় থাকলে, ঠিকমতো কাজ না করলে, পানিনিষ্কাশন নালায় সংযোগ দিয়ে পয়োবর্জ্য অপসারণ করা হলে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।