জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা জরুরি: উপদেষ্টা বিধান রায় পোদ্দার
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘তামাক এমন এক নীরব ঘাতক, যা শুধু ফুসফুস নয়, হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে তামাকজনিত রোগে, যা আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় অন্তরায়।’
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগীভাবে সংশোধন করা জরুরি। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করব, যাতে আইনটি দ্রুত সংশোধন হয়।’
‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা: তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। আজ বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে হৃদ্রোগ, ক্যানসারসহ অসংক্রামক রোগ এবং শিশুদের তামাকজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানান তরুণ চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেন, বর্তমান আইন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; এটি সংশোধন না হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি ব্যাহত হবে।
প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ডা. রামিসা ফারিহার উপস্থাপনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সহসাধারণ সম্পাদক ডা. ফারজানা রহমান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে (২০১৩) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩–১৫ বছর বয়সী ছেলেদের ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং মেয়েদের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ধূমপান করে। একই বয়সী ছেলেদের ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মেয়েদের ২ দশিমক ৯ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পাবলিক স্থানে এবং ৩১ শতাংশ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্বজুড়ে কিশোরদের মধ্যে তামাক ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে ডিজিটাল মাধ্যমে আগ্রাসী বিপণন চালাচ্ছে, যা এই বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। তাই তরুণদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করতে হবে।
সেমিনারে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, তামাকের ধোঁয়া শুধু ধূমপায়ীকেই নয়—আশপাশের মানুষকেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরোক্ষ ধূমপান শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারের বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী বলেন, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর তামাকের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। তরুণ প্রজন্মকে এই বিপদ থেকে রক্ষায় প্রস্তাবিত আইন সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ), শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর ডা. অরুণা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর।