দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার চেষ্টা জাপানি মায়ের, ফেরাল পুলিশ

এরিকো-ইমরান দম্পতি ও তাঁদের শিশুসন্তানেরা
ফাইল ছবি

দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার চেষ্টার সময় জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, দুই মেয়ে তাদের মায়ের হেফাজতে ছিল। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সিঙ্গাপুর উড়োজাহাজের একটি ফ্লাইটে তাঁরা জাপানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যেহেতু আদালতের নির্দেশনা ছিল না, তাই তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি।

দুই মেয়ের বাবা ইমরান শরীফ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আপিল বিভাগের রায় অমান্য করে পারিবারিক আদালতের চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগে দুই মেয়েকে নিয়ে মা জাপানে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ২৭ ডিসেম্বর আমি আপিল বিভাগে অভিযোগ করব।’

নাকানো এরিকোর আইনজীবী সূত্র জানায়, নাকানো এরিকোর মা জাপানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে দেখতে দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।

নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে যেতে চাওয়াটা ঠিক হয়নি। তারপরও বিষয়টি আদালতে মীমাংসা (সেটেল) করার চেষ্টা করব।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। তাঁদের তিন মেয়েসন্তান আছে। শিশুদের বয়স যথাক্রমে ১১, ১০ ও ৭ বছর। গত ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। আর ছোট মেয়েকে তার নানির কাছে রেখে ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো।

আরও পড়ুন

ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে বাংলাদেশে এসে ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুফুকে নির্দেশ দেন। শিশুদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়।

এর আগে ২২ আগস্ট রাতে বাবার কাছ থেকে ওই দুই শিশুকে নিয়ে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ অবস্থায় ২৩ আগস্ট শিশুদের ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেন শিশুদের বাবা। সেদিন হাইকোর্ট দুই শিশুসন্তানকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে (উইমেন সাপোর্ট সেন্টার) রাখতে আদেশ দেন। তখন আদালত বলেন, এ সময়ে সকালে মা ও বিকেলে বাবা তাঁদের মেয়েদের সঙ্গে দেখা করা ও সময় কাটাতে পারবেন।

আরও পড়ুন

আদেশ অনুসারে ধার্য তারিখ ৩১ আগস্ট উইমেন সাপোর্ট সেন্টার থেকে সিআইডির তত্ত্বাবধানে দুই শিশু আদালতে উপস্থিত হয়। আদালতে উপস্থিত হন তাদের বাবা ইমরান ও মা এরিকো। খাসকামরায় দুই শিশুর বক্তব্য শোনেন আদালত। শিশুদের মা-বাবার বক্তব্যও শোনেন। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট গুলশানের ফ্ল্যাটে শিশুদের রাখার আদেশ দেন।

আরও পড়ুন