অর্ধেকের বেশি মশককর্মী অনুপস্থিত, কাজও শুরু দেরিতে

আধঘণ্টা দেরিতে কাজে যেতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন মশককর্মীরা। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশা নিধন কার্যালয়, আজ মঙ্গলবার সকালছবি: প্রথম আলো

সকাল ৮টা ৪০ মিনিট। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশা নিধন কার্যালয় কক্ষের ভেতরে বসে ছিলেন ছয়জন মশককর্মী। কেউ ব্যস্ত মুঠোফোনে ভিডিও দেখায়, কেউবা চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছিলেন। অথচ নিয়মানুযায়ী আরও ১০ মিনিট আগেই, অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে তাঁদের নির্ধারিত এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য চলে যাওয়ার কথা।

নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাজে না যাওয়ার বিষয়ে কর্মীদের একজন আবদুল হাই বলেন, ‘বেশির ভাগ কর্মী কাজে আসেননি। তাঁদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কে আসবেন, কে আসবেন না, কিছুই জানি না। আমরা আগে কাজে বেরিয়ে গেলে কাজ শেষ করতে বিশৃঙ্খলা হবে। তাই অন্যদের অপেক্ষা করে দেরি করছিলাম।’

ওয়ার্ডটিতে মশা নিধনকাজে ১৭ জন কর্মী আছেন। তবে আজ সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে কর্মীরা যখন কাজের উদ্দেশ্যে বের হন, তখন কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন মাত্র আটজন, যা মোট কর্মীর অর্ধেকেরও কম।

এর আগে কার্যালয়ের ভেতরে বসে থাকা ওই কর্মীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ওয়ার্ডের মশা নিধনের কর্মীদের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার কে, তিনি আছেন কি না? এমন প্রশ্ন করতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র (স্প্রে মেশিন) হাতে বেরিয়ে আসেন কয়েকজন কর্মী। তাঁরা জানান, সুপারভাইজারের নাম আনোয়ারুল হক। তিনি ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেছেন, এখনো ফেরেননি।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মশা নিধনের কার্যক্রম দেখতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওয়ার্ডটিতে মশা নিধনকাজে ১৭ জন কর্মী আছেন। তবে আজ সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে কর্মীরা যখন কাজের উদ্দেশ্যে বের হন, তখন কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন মাত্র আটজন, যা মোট কর্মীর অর্ধেকেরও কম।

মশককর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ডটিতে করপোরেশনের নিজস্ব মশককর্মী তিনজন, ঠিকাদারের মাধ্যমে দৈনিক মজুরি চুক্তিতে নিয়োজিত আছেন মাল্টি ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন ও যমুনা লিমিটেডের ১ জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে আজ সকালে মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের সাতজন ও সিটি করপোরেশনের দুজন কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন।

এখন থেকে মশককর্মীদের এমন গাফিলতি আর হবে না।
এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটির ৫ নম্বর অঞ্চলের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুপস্থিত কর্মীরা হচ্ছেন আল আমিন, সাকিব, ইব্রাহিম, রকি, আবদুল্লাহ, আতিকুর ও আতিক উল্লাহ। অনুপস্থিত এসব কর্মীর বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই সাতজনের মধ্যে ছয়জন ঈদে গ্রামে গেছেন। একজন ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফিরেছেন, গতকাল কাজে এসেছিলেন। আজ হয়তো অসুস্থ।

সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মধ্যে শুধু আবদুল হাই উপস্থিত ছিলেন। সিরাজ মিয়া ও মো. ইকবাল কাজে আসেননি। অবশ্য কর্মীরা যখন ওষুধ ছিটানোর কাজে বেরিয়ে যাবেন, সেই মুহূর্তে ইকবালকে কাজে যোগ দিতে দেখা গেছে। তবে সিরাজের কাজে না আসার বিষয়ে আবদুল হাই বা অন্য কর্মীরা কিছু বলতে পারেননি।

আরও পড়ুন

ওষুধ মাপার কিছু নেই

মশা নিধনে সকালে যে ওষুধ ছিটানো হয়, সেই প্রক্রিয়াকে লার্ভিসাইডিং বলে। এ প্রক্রিয়ায় মশাকে লার্ভার পর্যায়ে নিধন করা হয়। লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য ডিএনসিসি টেমিফস ও নোভালিউরন ট্যাবলেট ব্যবহার করে। একেকজন মশককর্মী ৬০ মিলিলিটার (এমএল) ওষুধ নিয়ে কাজে বের হন। কর্মীরা এ পরিমাণকে সিসি বলে থাকেন। স্প্রে মেশিনে ১০ লিটার পানির সঙ্গে ১৫ এমএল করে ওষুধ মিশিয়ে জমে থাকা পানিতে ছিটান তাঁরা। এভাবে চারবারে ৪০ লিটার পানির সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে প্রয়োগ করা হয়।

আরও পড়ুন

সকালে ওই কার্যালয়ে কর্মীদের ওষুধ নেওয়ার সময় তা পরিমাপের কোনো পাত্র পাওয়া যায়নি। কর্মীরা হাতের আন্দাজে যে যাঁর মতো বোতল থেকে ঢেলে ওষুধ নিচ্ছিলেন। এতে কারও বোতলে বেশি, কারও বোতলে কিছুটা কম ওষুধ নেওয়া হচ্ছিল। কর্মীরা নিজেদের ব্যবহৃত কোমল পানীয়ের বোতলের ছিপিতে মেপে (১৫ মিলিলিটার ধরে নিয়ে) ওষুধ মেশান বলে জানান।

ওষুধ পরিমাপের পাত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রশিদ নামের ওই মশককর্মী দ্রুত ভেতরে গিয়ে পাত্র খোঁজার চেষ্টা করেন। আবদুল হাই নামের আরেক কর্মী বলেন, ‘সেই অনেক আগে একবার ওষুধ মাপার জন্য একটা পাত্র দেওয়া হয়েছিল। সেটা হারিয়ে গেছে। এখন চোখের আন্দাজেই ওষুধ ঢালি। একটু কমবেশি তো হয়।’

আগের দিনের ওষুধ

ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োজিত মশা নিধনের কর্মী আতিক উল্লাহ ঈদের ছুটি কাটিয়ে গতকাল কাজে এলেও আজ অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁর ব্যবহৃত স্প্রে মেশিনের সঙ্গে বাঁধা ছোট একটি প্লাস্টিকের বোতলে লার্ভিসাইড ওষুধ টেমিফস ছিল। পরিমাণ প্রায় ৩০ এমএল। ওষুধটি গতকালের বলে জানান অন্য কর্মীরা।

আগের দিনের ওষুধ তো অবশিষ্ট থাকার কথা নয়, এমনটা হলো কেন—জানতে চাইলে উপস্থিত কর্মীরা কোনো উত্তর দেননি।

সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের তালিকায় আতিক উল্লাহর যে যোগাযোগ নম্বর দেওয়া আছে, সেই নম্বরে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজার আনোয়ারুল হকের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি ধরেননি।

ওয়ার্ডটি ঢাকা উত্তর সিটির ৫ নম্বর অঞ্চলের আওতাধীন। অঞ্চলের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘ ছুটিতে ছিলেন। আজই দেশে ফিরেছেন। তবে তাঁর জায়গায় অতিরিক্ত দায়িত্বে অন্য এক কর্মকর্তা ছিলেন। এখন থেকে মশককর্মীদের এমন গাফিলতি আর হবে না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন