বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ করায় ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় সায়েমকে

নিহত আবু সায়েম ঢাকার মতিঝিলে একটি পোশাক কারখানার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন
ছবি: সংগৃহীত

আবু সায়েম (৩৫) ঢাকার মতিঝিলে একটি পোশাক কারখানার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিনের মতো কাজ সেরে বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসচালকের সহকারীর সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। স্বজনদের অভিযোগ, এই কারণে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে সায়েমকে। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সরণিতে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর একাধিক বাসযাত্রীর সঙ্গে স্বজনদের কথা হয়েছে জানিয়ে আবু সায়েমের বড় ভাই আবু সাদাত সাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, সায়েম কাজ শেষে বাসে করে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর বাসায় ফিরছিলেন। বাসচালকের সহকারী এক যাত্রীর কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেন। এ সময় সায়েম প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সরণিতে নামার সময় সায়েমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বাসচালকের সহকারী। নিচে পড়ে গেলে ওই বাসের পেছনের চাকা সায়েমের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনাকে হত্যা দাবি করে আবু সাদাত সাহেদ আরও বলেন, সায়েমকে লাথি দিয়ে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে যাত্রীরা বলেছেন। আশপাশে অনেক ক্লোজডসার্কিট ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

এ ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বাসচালক শাহ আলম (৪০) ও তাঁর সহকারী মোহনকে (২২) পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সায়েমের পরিবার ও স্বজনেরা জানান, আবু সায়েমের বাবার নাম হেদায়েত উল্লাহ। তিনি বেঁচে নেই। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সায়েম দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সায়েম সাড়ে ছয় বছর ধরে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা নিট প্লাস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অর্থ বিভাগের প্রধান আতিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খুবই ভালো মানুষ ও কর্মী ছিলেন সায়েম। তাঁর একটাই শখ ছিল, বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাওয়া। এবারের শীতে তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা যেতে আগেই ছুটি চেয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন।

সায়েম ফেসবুকভিত্তিক একটি ভ্রমণ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বন্ধু মো. খোকন। তিনি বলেন, সায়েম ঘুরতে পছন্দ করতেন। বন্ধুরাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ ছিল তাঁর শখ। যখনই সময় পেতেন, ঘুরতে যেতেন।

আরও পড়ুন

এই ঘটনার বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনা হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি এখনই বলা সম্ভব নয়। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে যাত্রীরা সেখান থেকে চলে যান। কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, তবে এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসলে কী ঘটেছিল।

এদিকে কথা–কাটাকাটির জেরে যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ী এলাকায় বাসভাড়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার কারণে চলন্ত বাস থেকে সায়েম নামের এক যাত্রীকে ফেলে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় বাসের চালক ও তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার ওয়ারীর জয়কালী মন্দিরের সামনে ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে ইরফান আহমেদ নামের এক যাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে এক টাকা ফেরত চাওয়ায় জসিম উদ্দিন নামের এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ ওঠে চালক ও তাঁর সহকারীর বিরুদ্ধে।