অবরোধ পরিস্থিতি: বিকেলের পর গাবতলী থেকে বাস ছাড়ার প্রস্তুতি

চিকিৎসা শেষে টাঙ্গাইলে ফিরে যাওয়ার জন্য গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে আসেন ইউনুস আলী ও তারা বানু। ১৩ নভেম্বর
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় ও শেষ দিন আজ সোমবার সকালে ঢাকার গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সব প্রস্তুতি রাখার পরও পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো গন্তব্যে বাস ছাড়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কর্মীরা।

এদিকে সকাল থেকে একজন-দুজন করে যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে টার্মিনালে আসছেন। তাঁদের বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। পর্যাপ্ত যাত্রী হওয়া সাপেক্ষে সন্ধ্যায় বা রাতে বাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে কাউন্টার থেকে যাত্রীদের টিকিট বুকিং নেওয়া হচ্ছে।

তবে জরুরি প্রয়োজনে যারা গ্রামের বাড়ি অথবা অন্য কোনো গন্তব্যে যেতে টার্মিনালে এসেছেন, তাদের কেউ কেউ নির্ধারিত বাসের অপেক্ষায় না থেকে বিকল্প উপায়ে রওনা হচ্ছেন। কেউ কেউ যাচ্ছেন প্রাইভেটকারে করে। কেউ বা আবার ভেঙে ভেঙে যেতে স্বল্প দূরত্বের বাসে উঠে বসছেন।

খুলনায় যাওয়ার জন্য গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে অপেক্ষায় বানু বিবি। ১৩ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা যায়, অবরোধের অন্যান্য দিনের মতো আজও গাবতলী টার্মিনালের অধিকাংশ টিকিট বিক্রির কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। এক–দুজন যাত্রী টার্মিনালে আসছেন। তবে কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, বিকেলের আগে কোনো বাস ছাড়া হবে না। যেতে চাইলে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় গাবতলী টার্মিনালে অর্ধশতাধিক যাত্রীকে টার্মিনালে আসতে দেখা গেছে। টিকিটের জন্য কাউন্টারে খোঁজ নেওয়ার পরে তাঁদের কেউ কেউ অপেক্ষা করেন। কেউ আবার রাতের বাসের জন্য টিকিট বুকিং দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। অনেকে আবার প্রাইভেটকারে করে গন্তব্যে রওনা হন।

সকাল থেকে একটি বাসও ছাড়া হয়নি বলে জানান সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আল আমিন। তিনি বলেন সকাল ৭টা থেকেই শিডিউলে গাড়ি ছিল। বাসগুলো প্রস্তুত রাখাও হয়েছিল। কিন্তু যাত্রী না থাকায় একটি গাড়িও ছাড়েনি। তবে রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে চারটি গাড়ির জন্য ৭-৮টি করে টিকিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

আল আমিন আরও বলেন, অবরোধে বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার কারণে মালিকদেরও ভয় আছে। লোকজনও সেই ভয়ে কোথাও যাচ্ছে না। বাসে আগুন দিলে তো যাত্রীরও ক্ষতি হতে পারে।

টিকিট বুকিং দিয়ে বাসের অপেক্ষায় বসে ছিলেন বানু বিবি। যাবেন খুলনায় মোংলা বন্দর এলাকায় মেয়ের বাসায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বাসা থেকে তিনি গাবতলী টার্মিনালে আসেন তিনি। ঢাকায় থাকা আরেক মেয়ের জামাই তাঁর জন্য টিকিট বুকিং দিয়ে রেখে গেছেন বলে জানালেন।

বানু বিবি জানান, ঢাকায় এক মেয়ের বাসায় থাকেন। খুলনায় আরেক মেয়ের বাসায় যাচ্ছেন। মেয়ের জামাই অসুস্থ। ওই মেয়ের বাসায় কদিন থাকতে হবে। দুপুর সাড়ে ১২টার নাগাদ বাস ছাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

বানু বিবি যে বাসের টিকিট বুকিং দিয়েছেন, পাশেই ছিলেন ওই বাসের সুপারভাইজার তানভীর ইসলাম। তিনি বলেন, বাস ছাড়ার টার্গেট সাড়ে ১২টা। তবে যাত্রী না পেলে আরও দেরি হতে পারে। কারণ যাত্রী ছাড়া তো বাস ছাড়া সম্ভব না।

তানভীর ইসলামের ভাষ্য, ‘অবরোধের আগে তো তাও ডাল-ভাত জুতত। এখন তো সেইটাও জুটছে না। বাস বন্ধ থাকলে তো মালিক পক্ষ আমাদের কোনো টাকা দেয় না।’

চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়—বিএসএমএমইউ) এসেছিলেন টাঙ্গাইলের ইউনুস আলী ও তারা বানু। আসার দিন অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা এসেছিলেন। উত্তরবঙ্গের কোনো গাড়িতে করে টাঙ্গাইল যেতে গাবতলী এসেছিলেন আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। কিন্তু গাড়ি না ছাড়ায় টার্মিনালে বসেছিলেন।

পরে বেলা ১১টার দিকে সাভার-বাইপাল এলাকায় চলাচল করে এমন একটি মহানগরের বাসে চলে যান ইউনুস আলী ও তারা বানু। ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িত যাওন লাগবোই। গাড়ি যহন বন্ধ, এখন ভাইঙ্গা যাওন ছাড়া উপায় নাই।’