সৈকতে ভেসে আসা কাঠে শিল্পকর্ম

শিল্পী আখতার আহমেদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তাঁর তৈরি ভাস্কর্য দেখছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

সৈকতে ভেসে এসেছিল কাঠ, গাছের ডাল, কাণ্ড ও শিকড়। সৈকত থেকে সেসব তুলে এনে তাতে শিল্পের সৌন্দর্য সঞ্চার করেন আখতার আহমেদ। সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে আখতার আহমেদের একক প্রদর্শনী চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে শুরু হলো এ প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর নাম ‘শিকড়ে প্রোথিত, ভালোবাসায় প্রসারিত’। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতার আহমেদ এবং তাঁর বাড়িও একই জেলায়, নীলফামারীতে। শিল্পকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলেও আখতার আহমেদের এই ভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য চর্চা বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। এটা তাঁর জন্মস্থান তথা দেশের জন্যও গৌরবের।

আখতার আহমেদ বলেন, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস। ২০০১ সালে প্রিয়ভাষিণীর একটি প্রদর্শনী দেখে তিনি গাছের কাণ্ড–শাখা নিয়ে ভাস্কর্য তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে শখের বশেই একটি দুটি করে ভাস্কর্য তৈরি করতে থাকেন।

কর্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন জানিয়ে এ শিল্পী বললেন, সেখানে আটলান্টিকের সৈকত থেকে ভেসে আসা এসব কাঠ সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সেগুলো দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করতে থাকেন। ভাস্কর্যের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বন্ধুদের উৎসাহ ও আগ্রহে ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি একক ও দুটি যৌথ প্রদর্শনী হলেও দেশে এটাই তাঁর প্রথম প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন। সূচনা বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থার (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

আখতার আহমেদ জানান, তাঁর তৈরি ৫৩টি ভাস্কর্য নিয়ে এই প্রদর্শনী। কিছু ক্ষেত্রে কাঠগুলো খুব বেশি পরিবর্তন না করে একটু ঘষেমেজে পাখি, মানুষসহ বিভিন্ন আকৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরেক ধরনের কাজও আছে। কাঠের গুঁড়া, সিমেন্ট ও আঠা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে কাঠের ওপর মানুষের মুখাকৃতি তৈরি করেছেন। এই দুই রকমেরই কাজ আছে প্রদর্শনীতে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বহু কৃতী বাঙালির ভাস্কর্য তৈরি করেছেন আখতার আহমেদ। অনেক খ্যাতনামা বিদেশিরও ভাস্কর্য তৈরি করেছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে কনসার্ট ফর বাংলাদেশে অংশ নেওয়া শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলানসহ অন্যদের ভাস্কর্যও রয়েছে। এসবের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু ভাস্কর্য তৈরি করেছেন এই শিল্পী। শরণার্থীদের যাত্রা, নির্যাতিত নারী, গণহত্যা এসব এসেছে তার শিল্পকর্মে।

আখতার আহমেদ জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। শিল্পকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই। যা কিছু করেছেন অভিজ্ঞতা আর নান্দনিক বোধ থেকেই। শখ থেকে করা তাঁর কাজ দর্শকদের ভালো লেগেছে এতেই তাঁর আনন্দ।