আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু আর নেই

গোলাম আরিফ টিপুছবি: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সৌজন্যে

অনন্তের পথে পাড়ি দিলেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর (অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার) আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে অন্তিম নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি আত্মীয়স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গোলাম আরিফ ২০১০ থেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গোলাম আরিফের ইন্তেকালের কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার গোলাম আরিফকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

গোলাম আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সৈয়দ হায়দার আলী। পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর তাঁর দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

গোলাম আরিফের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে। তাঁর বাবা আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। তিনি ছিলেন ৯ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। গোলাম আরিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বাম ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা আন্দোলন কর্মী ছিলেন। মহান মাতৃভাষা আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়। তাঁর নেতৃত্বেই রাজশাহী কলেজে প্রথম শহীদ মিনার হয়। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ২০১৯ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত ভূষিত হন।

গোলাম আরিফ ১৯৫৮ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত নিহার বানু হত্যা মামলায় তিনি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।