মোহাম্মদপুরের নীল চোখের ছেলেটি

সাকিব রহমানের নীল চোখে আটকে যায় চোখ
ছবি: মানসুরা হোসাইন

প্রথমেই চোখ আটকে গেল ২২ বছরের তরুণ সাকিব রহমানের চোখের নীলচে মণিতে। ছবি তুলতে চাইলে সাকিব হেসে বলেন, ‘সবাই চোখ নিয়ে কিছু না কিছু বলেই। কেউ জানতে চান, চোখে লেন্স লাগানো কি না। আবার কেউ সরাসরি বলেন, “আপনার চোখ এমন কেন?’”

নীলচে চোখ নিয়ে সাকিব বেশ গর্বিত, বোঝা যায় তাঁর কথায়। বলেন, ‘ছোটবেলায় গায়ের রং আরও সাদা ছিল। তখন চোখের রংটা আরও নীল দেখাত। এখন তো রোদে ঘুরে শরীরের সাদা রং অনেকটাই কালচে হয়ে গেছে।’

দিন কয়েক আগে সাকিবের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে। একটি পরিবহনের বাসের ই-টিকিট বিক্রির দায়িত্বপালন করছেন তিনি।

ছবি তোলার পর সাকিব জানান, যখন ছোট ছিলেন, এক ব্যক্তি বিক্রির জন্য তাঁর ছবি তুলেছিলেন। সাকিবের মা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে ওই ব্যক্তি পরে আর যোগাযোগ করেননি।

কিছুক্ষণ তাকালে মনে হয়, আকাশের নীলচে রং গিয়ে জমা হয়েছে সাকিবের চোখের মণিতে। রংটা নীলচে হলেও দেখতে কোনো সমস্যা হয় না তাঁর।

সাকিব বড় হয়েছেন ঢাকাতেই। এখন থাকেন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে। বাবা মারা গেছেন, মা আছেন। দুই বোনের মধ্যে এক বোনের বিয়ে হয়েছে। সাকিব মাধ্যমিক (এসএসসি) পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারপর জীবনযুদ্ধে নেমে যখন যে কাজ পাচ্ছেন, তা–ই করছেন। এখন সাকিবের কাছে ব্যতিক্রমী চোখ নিয়ে বিলাসিতা বা গর্ব করার চেয়েও একটি ভালো চাকরি বেশি জরুরি।

এর আগে সবুজ চোখের জন্য আলোচনায় এসেছেন অনেকে। অস্ট্রেলিয়ান আলোকচিত্রী ডেভিড লেজার ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এসেছিলেন বাংলাদেশে। রাজশাহীর পুঠিয়াতে এই আলোকচিত্রীর তোলা তুলি নামের সেই মেয়ের মুখ উঠে আসে ডিজিটাল ক্যামেরা ওয়ার্ল্ড আর ফটো রিভিউ অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফিবিষয়ক সাময়িকীর প্রচ্ছদে।

আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারির তোলা আফগান কিশোরী শরবত গুলার ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর প্রচ্ছদ হয় ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৫ সালে রাশিয়ার সামরিক দখলদারির বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের লড়াইয়ের সময় দেশটির এক শরণার্থীশিবিরে শরবত গুলা নামের ওই কিশোরীর ছবি তুলেছিলেন স্টিভ ম্যাককারি। ‘সবুজ চোখের আফগান মেয়ে’ হিসেবে দুনিয়ার মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে শরবত গুলার ছবির কথা। ২০০২ সালে আফগানিস্তানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে আবার তাঁকে খুঁজে পান আলোকচিত্রী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, ২০১৪ সালে পেশোয়ারে ‘শরবত বিবি’ নাম নিয়ে পাকিস্তানি নাগরিকত্বের পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করা নারীই হয়তো ছিলেন ‘সবুজ চোখের আফগান কিশোরী’ শরবত গুলা।

গত বছর বিবিসির খবর বলছে, তালেবান আবার আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় ইতালিতে নতুন জীবন শুরু করেছেন শরবত গুলা।