নতুন ড্যাপ
রাজধানীকে নতুন করে গোছানোর সম্ভাবনা ও সুযোগ
নগরজীবনের উৎকর্ষের জন্য বেশি জরুরি হলো জনপরিসর; ছোট ছোট প্লটের পরিবর্তে বড় জমি নিয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ বসবাসের ব্যবস্থাপনা আবশ্যক।
শহরগুলো যে এ যুগে জটিল আকার ধারণ করেছে, তা আমরা সবাই মানি। পৃথিবীর জটিল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা সম্ভবত সবচেয়ে জটিলতম। ঢাকাকে একটি কনক্যাটেনেশন বা গ্রন্থিল শহর বলা যেতে পারে। মানে একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িয়ে–পেঁচিয়ে গড়ে ওঠা এক জটিল সম্ভার। ঢাকার ক্রমবর্ধমান ও বল্গাহীন বৃদ্ধির কারণে এই জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে।
শহরটির নানা জট নিরসনের দায়িত্ব সব সময়ই অর্পিত ছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওপর। কিন্তু এই গতিশীল শহরের উন্নয়নের জন্য একটি যথাযথ ও কার্যকর পরিকল্পনা তৈরিতে রাজউক মোটের ওপর ঢাকাবাসীকে হতাশ করেছে। ১৯৫০–এর দশক থেকে শুরু করে ঢাকা শহরকে ঘিরে যে কয়েকটা মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সব কটিই খুব সাধারণ মানের ও অপর্যাপ্ত।
সে পটভূমিতে রাজউকের ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ ঢাকা শহরের পরিকল্পনার ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছে। এ পরিকল্পনায় এমন কতগুলো নতুন ধ্যানধারণা ও প্রস্তাব আছে যেগুলোকে যুগান্তরী ও উদ্ভাবনী কল্পনাসম্পন্ন বলা যায়।
আগের বহু লেখায় আমি রাজউকের সমালোচনা করেছি। বলেছি যে তাদের একের পর এক প্রণীত পরিকল্পনাগুলো ঢাকা শহরের গতিশীলতাকে ধারণ করতে কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ডিজাইনিং ঢাকা বইয়ে আমি স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেছিলাম, কীভাবে আমাদের শহর গঠনে কতগুলো মৌলিক ব্যাপার আমরা আমলে নিচ্ছি না।
যেমন বলেছিলাম, বদ্বীপ অঞ্চলে হাইড্রোলজিক্যাল গতিধারা নগর গঠনের মূল ভিত হওয়া উচিত; নগরজীবনের উৎকর্ষের জন্য বাড়িঘর ও আবাসনের চেয়েও বেশি জরুরি হলো পাবলিক স্পেস বা জনপরিসর; ছোট ছোট প্লটের পরিবর্তে বড় জমি নিয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ বসবাসের ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। ঘের দেওয়া স্বতন্ত্র বাড়িঘর তৈরির জন্য বড় এলাকাকে ছোট ছোট প্লটে বিভক্ত করে বিক্রি–বণ্টন করাই আমাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিত নাগরিক জীবন এবং শহরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রচনার ভাবনা কখনোই বিবেচিত হয়নি।
এসবের প্রেক্ষাপটেই ড্যাপ ২০২২-৩৫ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই পরিকল্পনার যথাযথ পরিচর্যা ও বাস্তবায়ন ঢাকা নিয়ে এ পর্যন্ত রাজউকের নিজের ধারা এবং সাধারণ চর্চাগুলোকে পাল্টে দিতে পারে। অনেক সময় আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে ব্যাপকতা ও জটিলতা উপেক্ষা করে সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ দিয়ে পুরো শহরকে বোঝার করার চেষ্টা করি। নতুন ড্যাপে যে বিস্তার ও ব্যাপকতাকে আত্মস্থ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমার আলোচনায় আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে চাই।
নতুন নগরভাবনা
আমরা আনন্দিত যে ড্যাপ ২০২২-৩৫-এর মধ্যে চিন্তার সার্বিকতা ও সমকালীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে নতুন একটি শহর ও সমাজ নিয়ে ভাবার জন্য ড্যাপের দলিল আমাদের আমন্ত্রণ ও প্ররোচিত করছে। নগরভাবনা নিয়ে ‘আরবানিজম’ বলে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তার যথাযথ কোনো বাংলা প্রতিশব্দ নেই। আমরা নগরায়ণ বলে যে শব্দটি ব্যবহার করি, তা দিয়ে ইতিহাসের মধ্য দিয়ে মানুষ হিসেবে সমষ্টির গঠন ও অস্তিত্বের ধারাবাহিক পর্যায়ক্রমকে খুব একটা বোঝা যায় না।
‘আরবানিজম’ শব্দে আছে একটি নগরের ভৌত ও মানবিক সংগঠনের বহিঃপ্রকাশ; নাগরিকতা, মানবিকতা ও জনকল্যাণের সমন্বয়। সাম্প্রতিক ড্যাপ আরবানিজমের কথা সরাসরি না বললেও কোনো খটমটে সরকারি দলিলে প্রথমবারের মতো আরবানিজমের একটি ধারণা পেলাম। সে জন্য এই ড্যাপকে একটি প্রগতিশীল প্রস্তাব হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই।
সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা এই ড্যাপের একটি অঙ্গীকার। ড্যাপে তথ্য–উপাত্ত দিয়ে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হলেও অনেকের কাছে জটিল বলে মনে হতে পারে। তাই প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্যভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানুষের সামনে আরও প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। সিঙ্গাপুরে দেখেছি, নগর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা ছবি, পোস্টার ও মডেল দিয়ে মানুষের সামনে সহজভাবে প্রদর্শন করছে।
ড্যাপের সবচেয়ে নবতর ধারণা হচ্ছে, বাংলাদেশের হাইড্রোলজিক্যাল প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতে নতুন নির্মাণরীতি চিন্তা করা। এর সঙ্গে জড়িত প্লাবনভূমি, জলাভূমি এবং নদীবিধৌত সমতলে জনপদ ও বসবাসের জীবন ও জীবিকা কেমন হতে পারে, তা নির্ধারণ করা। আগের কোনো নগর–পরিকল্পনায় এসব বিষয়ে কোনো বিচক্ষণ দৃষ্টিপাত করা হয়নি।
পরিবেশ ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের শহর-নগর গড়ার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পরিবেশ আর উন্নয়নের পরস্পরবিরোধী সম্পর্ক। পরস্পরকে ক্ষুণ্ন না করে কীভাবে পরিবেশ, হাইড্রোলজি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সমন্বয় ঘটানো যায়, আগামী দিনে সেদিকে স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের দৃষ্টিপাতের জন্য নতুন ড্যাপে আলোচনা করা হয়েছে। বদ্বীপ শহর পরিকল্পনায় বর্তমান মত হচ্ছে, ‘বন্যা বইতে দাও, পানি প্রবাহিত হতে দাও।’
এ ধারণায় জলপ্রবাহের সঙ্গে পলি পড়ার বিষয়টিও ড্যাপে আলোচনা করা হয়েছে। এ ধারণায় বন্যা সুরক্ষাকৌশল হিসেবে বড় আকারের বাঁধ যে ক্ষতিকর, এই ড্যাপে তার উল্লেখ আছে। বর্তমান ড্যাপের সুপারিশ হলো, ‘খনন ও ভূমি উন্নীতকরণ’। শেরেবাংলা নগরের নকশা করার সময় স্থপতি লুই কানের কথায় আমরা এ কথা প্রথম শুনেছিলাম।
ঢাকার আশপাশের বহু জলাভূমি এখন দখল ও অবৈধ নির্মাণের শিকার। এগুলো সংরক্ষণের নীতি ড্যাপে আগেও ছিল। কেবলই নীতি দিয়ে জলাভূমি সংরক্ষণ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা ড্যাপের প্রস্তাবে সংশোধনী এনে নতুন ধারণা অন্তর্ভুক্ত করতে বলব। সংরক্ষিত এলাকা ঘিরে বিশেষ উন্নয়ন এলাকা চিহ্নিত করা জরুরি, যার গঠন ও আয়োজনে নতুন ধরনের আরবান পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। এসব নতুন নির্মাণ হতে পারে গোষ্ঠীবদ্ধ আবাসন, সংরক্ষিত এলাকার চারদিকে, যা বেষ্টনী তৈরি করবে। আমরা নগর–পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে সুচিন্তিত ধারণা প্রস্তাব করতে পারি।
দলিলে বলা হয়েছে, রাজউক এলাকার প্রায় ২৮ শতাংশ কৃষিজমি। তথ্যটি আমাকে খুবই ভাবিয়েছে। ড্যাপের প্রস্তাব অনুযায়ী, এই কৃষিজমি সংরক্ষণই হয়ে উঠবে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে এবং কৃষক পরিবারগুলো আদি পেশা পরিবর্তন করছে, সেখানে এই সংরক্ষণনীতি কীভাবে কার্যকর হবে, তা পরিষ্কার নয়।
একটা সমাধান হতে পারে ড্যাপের নতুন প্রস্তাবিত রীতি ‘ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইট’ বা ‘উন্নয়ন অধিকার স্থানান্তর’–এর মাধ্যমে। একজন কৃষি বা জলাভূমির মালিক তাঁর উন্নয়ন অধিকার শহরের অন্য এলাকায় বিনিময় করতে পারেন। যেকোনো নতুন প্রক্রিয়া চালু করা নিয়ে দ্বিধা-সংশয় থাকতেই পারে।
এই পদ্ধতি কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে, আমরা তা দেখতে পারি। আরেকটি বিকল্প হতে পারে একটি সংঘবদ্ধ কৃষি কমিউনিটি তৈরি করা, যেখানে আধুনিক চাষাবাদের জন্য কৃষিজমি সংরক্ষিত থাকবে। আর তার প্রান্ত বেষ্টন করে থাকবে পরিকল্পিত বসতি। শহরের সন্নিকটে কৃষিজমিগুলোকে পার্কের মতো করেও ব্যবহার করা যায়। এতে নগরকাঠামো এবং কৃষিভিত্তিক গ্রামের ভেদ ঘুচে আসবে।
পাড়ার নিবিড় যোগ
ড্যাপের নতুন দলিলে ‘নেইবারহুড’, অর্থাৎ পাড়া বা মহল্লাভিত্তিক পরিকল্পনার একটি নতুন ও বড় তাগিদ এসেছে। বিশ্বজুড়েই এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ পাড়া। প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো প্রস্তাব করেছেন ‘১৫ মিনিটের শহর’–এর। এর মানে, ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা দৈনন্দিন চাহিদা—যেমন স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, এমনকি কাজের জায়গায় হেঁটেই যাওয়া যাবে। এর সঙ্গে ব্লক হাউজিংয়ের নতুন ধারণা জড়িত। আগেই বলেছি, ঢাকা শহরকে আমরা দেখে এসেছি প্লটের পরিমাপে। আমার প্লট, আমার বাড়ি। এতে ঢাকা যেটা হারিয়েছে, সেটা হলো পাড়ার গঠন ও প্রতিবেশ। প্লটের নেশায় আমরা সমষ্টির আয়োজনকে জলাঞ্জলি দিয়েছি।
প্লটপ্রধান পরিকল্পনায় প্লটের মালিক আর আবাসন ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো হয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা আবাসন তৈরি করছেন। কথাটা সত্য নয়। তাঁরা তৈরি করে চলেছেন পরস্পরবিচ্ছিন্ন ইউনিটের পর ইউনিট। এসব ইউনিটের যোগফল গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজে কোনো অবদান রাখে না; আবাসন বলতে আমরা যা বুঝি এতে তা গড়ে ওঠে না। ড্যাপের ব্লক হাউজিংয়ের ধারণা প্রচলিত এই প্রথাকে পাল্টে দিতে পারে। গড়ে তুলতে পারে নতুন ভৌত ও সামাজিক বুননের ভিত্তি। এসব বিষয় নিয়ে আরও গভীর আলোচনা জরুরি।
ছোট প্লট মানে সেট-ব্যাকের জন্য জায়গা ছাড়া, প্লটের মধ্যে সীমানাদেয়াল তৈরি করা এবং নিজের গণ্ডিতে বিচরণ করা। অথচ কয়েকটা ছোট ছোট প্লট একত্র হলে ব্লক হাউজিং গড়ে ওঠে। সেখানে সেট-ব্যাকের অপচয় না ঘটে সামাজিক যোগসূত্রের সূচনা হয়। সবার ব্যবহারের জন্য খোলা জায়গা পাওয়া যায়। তবে এ কথা ঠিক যে ঘনবসতিপূর্ণ ও প্রতিষ্ঠিত এলাকায় এটি দুরূহ কাজ।
পরিবহন ও যাতায়াত
ঢাকার গণযাতায়াত মাধ্যম সব সময়ই অপ্রতুল ও ভঙ্গুর। আমরা আশা করছি, সরকারের এমআরটি (মেট্রোরেল ট্রানজিট) এবং বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) ব্যবস্থা নতুন মাত্রা এনে দেবে। এমআরটি গণযাতায়াতব্যবস্থা হলেও নগর পরিবর্ধন ও বসতিবিন্যাসের এক বড় উপাদান। ট্রানজিট স্টেশন ঘিরে এবং ট্রানজিট লাইন ধরে টোকিও বা ব্যাংককের মতো নতুন ধাঁচের এলাকা গড়ে উঠতে পারে।
ড্যাপে যাতায়াত ব্যবস্থাভিত্তিক উন্নয়ন নিয়ে যে আলোচনা আছে, তার চেয়ে এর সম্ভাবনা আরও বেশি। যেমন, স্টেশন বা লাইন ধরে আরও ঘনবসতির চিন্তা করা যেতে পারে।
এমআরটি এবং বিআরটির মতো ট্রানজিটব্যবস্থার সফলতার জন্য প্রয়োজন হাঁটাচলার উপযুক্ত অবকাঠামো। ঢাকায় পথচারী মানুষের সংখ্যা কম নয়, প্রায় ৪০ শতাংশ। শহরের মানবিকতা এবং বাসযোগ্যতা বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হলো সুষ্ঠু পদচারী ব্যবস্থা। ট্রানজিট পদ্ধতি সফল করতে হলে দরকার উদার পদচারী ব্যবস্থাপনা। ট্রানজিট স্টেশনে হেঁটে না যাওয়া গেলে এমআরটি এবং বিআরটির মৌলিক উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
মানুষের মেলামেশার পরিসর
কোনো শহরের বাসযোগ্যতার বড় মাপকাঠি হলো সে শহরের জনপরিসর। এই নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। কিন্তু ঢাকায় মানসম্মত পাবলিক স্পেস বা জনপরিসরের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
ড্যাপের একটি বড় আলোচনা–সমালোচনা এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা মেঝের পরিসরের অনুপাত) নিয়ে। এফএআর মানে একটা প্লট বা এলাকার বাড়িঘর নির্মাণের সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ এফএআর হয়ে দাঁড়ায় জনঘনত্ব নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। এটি একটি জটিল কাজ। আগে প্রচলিত ড্যাপে এফএআর নির্ণয় করা হয়েছে কোনো প্লটের এবং সামনের সড়কের মাপ থেকে। তারই ফসল বর্তমান ঢাকা, যেখানে যত্রতত্র উঁচু দালান উঠে শহরের বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে।
এই ড্যাপে নতুন এফএআর ব্যবস্থা নির্ণয় করা হয়েছে মূলত এলাকাভিত্তিক জনঘনত্বের হিসাব অনুযায়ী এবং এলাকার রাস্তাঘাটের প্রতুলতা ও অত্যাবশ্যকীয় সেবা–সুবিধার অবস্থা পর্যালোচনা করে। নতুন ড্যাপের ব্যাখ্যায় জনঘনত্বের প্রভাব শুধু একটা প্লটেই সীমাবদ্ধ নয়, পুরো এলাকায়ই প্রযোজ্য। এর বিপরীতে আলোচকেরা অবশ্য বলছেন যে রাস্তাঘাট ও নাগরিক সুবিধার অভাবের কারণে কোনো এলাকা যেন অন্য এলাকার চেয়ে কম এফএআর ভোগ না করে।
এটা পরিষ্কার যে জরুরি আলোচনা এড়িয়ে অনেকে এফএআর নিয়েই বেশি চিন্তিত ও ব্যস্ত। আমাদের প্রস্তাব, রাজউক এ ব্যাপারে দুটো কাজ করতে পারে। এক. উদ্বিগ্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনমতো এলাকাভিত্তিক এফএআর সংশোধন করা। দুই. নতুন এফএআরের সারবস্তু ও উপস্থাপন সহজ ছবি ও বর্ণনা দিয়ে মানুষের কাছে প্রকাশ করা।
ঢাকা শহরের প্রভাব সারা বাংলাদেশে। এই ড্যাপের প্রভাব তাই সারা দেশেই পড়বে। গেজেট হয়ে গেলেও ড্যাপ এমন দলিল নয়, একে পরিমার্জন করে আরও উন্নত স্তরে নেওয়া যাবে না। একে কী করে আরও সর্বসাধারণের উপযোগী করা যায়, সে ভাবনাচিন্তা আমরা করতে পারি।
কাজী খালিদ আশরাফ স্থপতি ও নগরবিদ এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টের পরিচালক