নাম ‘মশক নিবারণী দপ্তর’, নেই মশা মারার ক্ষমতা

লালবাগের ১ একর ৩৯ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের মোট কর্মী ২৪১ জন। তাঁদের বেতন–ভাতা হয় রাজস্ব খাত থেকে। এখন দেশজুড়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরের প্রায় আড়াই শ মানুষের দায়িত্ব কী, তা জানতে আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর লালবাগে মশক নিবারণী দপ্তরের কার্যালয়ে যাওয়া। গিয়ে জানা গেল, মশা নিধনে ওষুধ কেনা, সংরক্ষণ, মজুত ও ছিটানোর কোনো দায়িত্ব সরাসরি পালন করার নিজস্ব ক্ষমতা নেই এ দপ্তরের।

লালবাগের ১ একর ৩৯ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত দোতলা ভবনে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর। এই দপ্তরের নিচতলার গুদামে কিছু মশা মারার ওষুধ মজুত আছে। তবে এর কোনোটির চাবি এই দপ্তরের কাছে নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা জানালেন, দুটি গুদামই ব্যবহৃত হচ্ছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওষুধ মজুতের জন্য। চাবি তারাই নিয়ে গেছে। দোতলায় মোট কক্ষ নয়টি। আছে মিলনায়তন। এর মধ্যে চারটি কক্ষ ছাড়া বাকিগুলো ছিল বন্ধ।

‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের’ ২৪১ জনের মধ্যে ২২৫ জনই হচ্ছেন ‘ক্রু’ (মাঠপর্যায়ে মশকনিধনকর্মী) ও ‘সুপারভাইজার’। যাঁরা কাজ করেন মাঠপর্যায়ে। আর কার্যালয়ে আছেন ১৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কর্মকর্তারা জানালেন, তাঁদের মোট জনবলের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ১৩২ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ৯৩ জন কর্মী কাজ করেন। তবে দুই সিটি করপোরেশনেরই আছে নিজস্ব কর্মী, যাঁরা স্থায়ী ও অস্থায়ী দুভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত। এর মধ্যে দক্ষিণের জন্য মশা নিধনে যুক্ত কর্মী আছেন ১ হাজার ৫৫ জন। উত্তরের কর্মী মোট ৮৯৬ জন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক ফজলে শামসুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের মাঠপর্যায়ে থাকা সুপারভাইজারদের আমরা চিঠি দিয়ে ফিরিয়ে নিতে বলেছি। তাঁদের ছাড়াও কাজ করা সম্ভব। তাঁরা থাকায় নিশ্চয়ই সহযোগিতা হচ্ছে, তবে এমন নয় তাঁদের ছাড়া সিটি করপোরেশন কাজ চালাতে পারবে না।’  

ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উদ্দেশ্য লেখা আছে, ‘ঢাকা মহানগরের মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করা এবং কীটনাশকের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ।’ গত ৩ জানুয়ারি প্রকাশিত এ দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোয় বর্তমান কর্মপদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। তাতে ঢাকা মহানগর এলাকায় মশার উপদ্রব দমন, মশার শূককীট ও মুককীট সংগ্রহ, পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পূর্ণাঙ্গ মশা সংগ্রহ এবং মশক প্রজননস্থল, যেমন ডোবা, নালা, ঝিল, নর্দমা ইত্যাদি নিয়মিত মশার কীটনাশক ছিটানো ও পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে।

বাস্তবে এসব কাজ করার নিজস্ব ক্ষমতা দপ্তরটির নেই। এ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর একটি হস্তান্তরিত প্রতিষ্ঠান। এখানকার কর্মচারী বিশেষ করে যাঁরা ক্রু এবং সুপারভাইজার, তাঁরা সবাই সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করেন। এর বাইরে তাঁদের কিছু করার সুযোগ নেই। আমি সপ্তাহে দু–এক দিন যাই। অর্গানোগ্রাম নিয়ে কাজ চলছে এখন। একটি প্রকল্প হবে সামনে।’ তবে এই প্রকল্পটি কী নিয়ে হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

মশার ওষুধ বা যন্ত্রপাতি কেনার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে শামছুল ইসলাম বলেন, এই সুযোগ দপ্তরটির এখন নেই। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না।
একসময় নগর ও নগরের মানুষকে মশামুক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’। ১৯৪৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজ করেছে এ প্রতিষ্ঠান। ১৯৮০ সালে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্তে দপ্তরের জনবল, সম্পদ বা যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। তবে ২০১১ সালে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত করে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুটি করপোরেশন গঠন হয়। এর পর থেকে ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’ দুই করপোরেশনের সঙ্গে মিলে কাজ করছে।