সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা বাড়ি দেশের সম্পত্তি, রক্ষার দায়িত্ব সবার: হাইকোর্ট

হাইকোর্টফাইল ছবি

‘দেশের সম্পত্তি মানে আপনার-আমার সবার সম্পত্তি। এটি রক্ষার দায়িত্ব সবারই।’ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এক শুনানিতে এ কথা বলেন।

রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের একটি বাড়ি সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। পক্ষগুলোর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ-সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন।

আবদুস সালাম মুর্শেদী আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও সাবেক ফুটবলার। রাজধানীর গুলশান-২-এ অবস্থিত পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি দখলে রাখার অভিযোগ তুলে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক (বর্তমানে সংসদ সদস্য)।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে বাড়ি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর রাজউক নথি দাখিল করে। পরে বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে প্রশ্ন ওঠা ওই ভূমি বা প্লটের চেইন অব টাইটেল (মালিকানা হস্তান্তরের পরম্পরা), দখল-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে পক্ষগুলোকে হলফনামা (অ্যাফিডেভিট ইন অপজিশন) দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় নথি ও কাগজপত্র যুক্ত করে দুদককে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়ির (ভূমি বা প্লটের মালিকানা হস্তান্তর) পরম্পরার তথ্য আদালতে তুলে ধরেন দুদকের আইনজীবী। আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক ও সৈয়দ সায়েদুল হক শুনানিতে অংশ নেন। সালাম মুর্শেদীর আইনজীবীর পক্ষে স্বল্প সময়ের জন্য শুনানি মুলতবি (শর্ট পাসওভার) চান আইনজীবী হাসান হাবিব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ।

‘দেশের সম্পত্তি মানে আপনার-আমার সবার সম্পত্তি’

শুনানিতে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘গণপূর্ত, রাজউক ও দুদক বাড়ির বিষয়ে তদন্ত করেছে। কথা হচ্ছে, ওই জমিটি অবমুক্ত হয়নি, পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যেই আছে। রাষ্ট্রের সম্পত্তি যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য রিট করা হয়। এত কিছু প্রমাণিত হওয়ার পরও বাড়িতে তিনি থাকছেন, তা কীভাবে অনুমোদনযোগ্য? ওই সম্পত্তি অবমুক্ত হয়েছে, উনি (সালাম মুর্শেদী) তা–ও বলছেন না। তাঁর (সালাম মুর্শেদী) কি সেখানে থাকার অধিকার আছে? তাঁর ওখানে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই।’

একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘সম্পত্তিটি কি পরিত্যক্ত, নাকি ব্যক্তিগত?’ তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘জবাব প্রস্তুত করে দাখিল করা হবে। এ জন্য কিছু সময় প্রয়োজন।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘দেশের সম্পত্তি মানে আপনার-আমার সবার সম্পত্তি। এটি রক্ষার দায়িত্ব সবারই।’

রাজউকের আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ বলেন, ‘গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দিয়েছে যে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয়।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত না হলে তা হস্তান্তর করার কোনো অধিকার কারও নেই। যদি না কোর্ট অব সেটেলমেন্টের মাধ্যমে তা অবমুক্ত হয়। এই কোর্ট অব সেটেলমেন্টের কোনো আদেশ বা রায় আছে কি না?’

আদালতকে রাজউকের আইনজীবী বলেন, ‘আছে।’ তিনি রুল শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেওয়ার আরজি জানান। পরে আদালত আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন।