হেমন্তের হিমেল রাতে আলোঝলমলে মঞ্চে জনপ্রিয় বাংলা গানের সঙ্গে দেশি বস্ত্র, অলংকার, কারুপণ্যে দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরলেন তারকা মডেলরা। শুক্রবার ছুটির দিনের রাতে রাজধানীর গুলশান ক্লাবের ল্যামডা মিলনায়তনে এই মনকাড়া ফ্যাশন শোর আয়োজন করে ‘হেরিটেজ পল্লি’।
মঞ্চে মডেলদের পদচারণের আগে ছিল সংক্ষিপ্ত সূচনা পর্ব। বিশাল ডিজিটাল পর্দায় দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস–ঐতিহ্যের পরিচিতির সঙ্গে ৩০ বছর ধরে হেরিটেজ পল্লির কার্যক্রমের পরিচিতি তুলে ধরা হয়। হেরিটেজ পল্লির প্রতিষ্ঠাতা ফ্যাশন ডিজাইনার ও কোরিওগ্রাফার টুটলি রহমান বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্প, হস্ত ও কারুশিল্পের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা দিতে হেরিটেজ পল্লি কাজ করছে। দেশে–বিদেশে নিয়মিত ফ্যাশন শো, তাঁতি ও কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণনসহ তাঁদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই ফ্যাশন শো। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বয়নশিল্পের বর্ণাঢ্য বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে লোকশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত নকশার গয়না, বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ ও স্থানীয় উপকরণে তৈরি সাজসজ্জার সামগ্রী। এই ফ্যাশন শোতে উপস্থাপিত পোশাকসহ সবকিছুই তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ দেশি উপকরণ ব্যবহার করে।
এরপর এক জীবনসংগ্রামী নারীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। জীবনের বহু প্রতিকূলতা জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন আসমা আক্তার। তাঁর জীবনসংগ্রাম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুই শিশুসন্তান নিয়ে আসমা গৃহপরিচারিকার কাজ করা থেকে অনেক রকম কাজ করেছেন। বস্তিতে থেকেছেন। একটা পর্যায়ে তিনি খুব সাধারণ উপকরণ দিয়ে অলংকার ও গৃহ সাজসজ্জার সামগ্রী তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন। এখন তাঁর চারজন কর্মী। নিজে ১৭ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। সামনে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় রয়েছে তাঁর। মঞ্চে আসেন আসমা আক্তার। তাঁকে হেরিটেজ পল্লির পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়।
এরপর শুরু হয় মডেলদের পদচারণ। একটু ব্যতিক্রম ছিল তাঁদের পরিবেশনা। মঞ্চে পদক্ষেপের পাশাপাশি তাঁরা কখনো কখনো দর্শকসারির মাঝ দিয়েও এগিয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে নৃত্য ও অভিনয়ের আঙ্গিকে পোশাকগুলো উপস্থাপন করেছেন।
মেরুন রঙের মিরপুরী কাতান শাড়ি পরে ‘জমিদার বউ’–এর সাজে ‘কে বাঁশি বাজায় রে’ গানের সঙ্গে ছিল প্রথম পরিবেশনা। এরপর ‘শোনো কোনো এক দিন, আকাশ–বাতাস জুড়ে রিমঝিম’ গানের সঙ্গে নৃত্যের ভঙ্গিতে ছিল দ্বৈত উপস্থাপনা। নারী মডেলের পরনে ছিল নীল জামদানি শাড়ি ও পুরুষের পোশাক ছিল ধুতি ও জামদানির মোটিফের পাঞ্জাবি। ‘দেখছ কি তাকে’ গানের সঙ্গে চার নারী মডেল মঞ্চে আসেন চার রঙের নকশিকাঁথার কাজ করা শাড়ির সজ্জায়। মণিপুরি শাড়ি ও মণিপুরি বস্ত্রের ফতুয়া পরে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশনের আঙ্গিকে পরের পরিবেশনাটি ছিল ‘ফাগুনের কাল আইলো রে’ গানের সঙ্গে । ‘গামছার শাড়ি ও শার্ট পরে চারজনের পরিবেশনা ছিল ‘ইচ্ছা করে পরানডারে গামছা দিয়া বান্ধি’ গানের সঙ্গে।
রিকশা আর্টের আঙ্গিকে নকশা করা শাড়ি পরে মঞ্চে আসেন চার মডেল ‘ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি’ গানের সঙ্গে। লাল, নীল জামদানির সজ্জায় পরের পরিবেশনা ছিল ‘মাধবী মধুপে হলো মিতালি’ গানের সঙ্গে। ‘তোকে দেখে মনের স্পিকার’ গানের সঙ্গে মিরপুরের কাতানের সঙ্গে ফিউশনের সমন্বয়ে তৈরি পোশাকে মঞ্চে আসেন তিন মডেল। ‘ও মোর ময়না গো’ গানের সঙ্গে ছিল তাঁতের শাড়ি; ‘তুমি যাইও না’ গানের সঙ্গে শার্টিনের থ্রিপিস; ‘মহাজাদু’ গানের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কামিজ ও শেষে ‘চোখে চোখে কথা বলো’ গানের সঙ্গে বর্ণবহুল শাড়ির পরিবেশনায় শেষ হয় এই চমৎকার ফ্যাশন শো।
ফ্যাশন শোর সব পোশাকের ডিজাইন, কোরিওগ্রাফি ও পরিকল্পনায় ছিলেন টুটলি রহমান। মডেলদের মধ্যে ছিলেন মারিয়া, শামিরা, তৃণ, সৌরভ, লিন্ডা, তামান্না, তানিয়া, তানহা, শাওন, সারিকা, জারা, রিতিকা, অভি, অনন্যা ও কেয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সানজিদা হক, ধন্যবাদ জানান আনিজা চৌধুরী।