সমাজ ছিনতাই ও বেদখল হয়ে যাচ্ছে৷ সামাজিক শক্তি নিয়ে না দাঁড়ালে এটি আটকানো যাবে না৷ সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে সমাজের বেদখল হওয়া ঠেকাতে দরকার একটা বিরাট সাংস্কৃতিক আন্দোলন৷
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন৷
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) ধারণ করে জাতির এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই জায়গা থেকে জাতি প্রতিদিন সরে যাচ্ছে।
অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন-হত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ‘রুখো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ স্লোগানে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, প্রগতি লেখক সংঘ, প্রাচ্যনাট, বটতলা, থিয়েটার বায়ান্ন ও আরণ্যক যৌথভাবে ‘প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মঞ্চের’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করে৷
সমাবেশে খেলাঘর কেন্দ্রীয় আসরের চেয়ারপারসন মাহফুজা খানম বলেন, ‘যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেননি, তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করার পর পুরো জাতি উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করল৷ পরবর্তী সময়ে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা আমাদের পাঠ্যক্রমের ভেতর দিয়ে নতুন করে আবার চক্রান্ত করেছে৷ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবলুপ্ত করতে চাইল৷ সংবিধানের চার মূলনীতিকে অবদমিত ও পদদলিত করে তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকল৷ আজ দেশের উন্নয়নের ধারাকে স্বীকার করেই বলব, পাঠ্যক্রমের ভেতর দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, বিবেক ও সততা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে জাতির স্থায়িত্ব খুব বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না৷ আমরা দেখছি প্রতিদিন সেটা ভেঙে পড়ছে৷ শিক্ষকদের অবমাননার ঘটনা ঘটছে৷ সংবিধানের চার মূলনীতিকে ধারণ করে জাতির এগিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই জায়গা থেকে জাতি প্রতিদিন সরে যাচ্ছে৷’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিপিবির নেতা এম এম আকাশ বলেন, ওখানে (ভারতে) হিন্দুত্ববাদ জাগ্রত হচ্ছে, এখানে জাগ্রত হচ্ছে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা৷ সুতরাং দুই জায়গার ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি জাগ্রত না হলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না৷ সব সময় রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থেকে এটা আটকানো সম্ভব নয়৷
উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সংগঠক রঘু অভিজিৎ রায়, খেলাঘরের নেতা শফিকুর রহমান, প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি শামসুজ্জামান প্রমুখ।
আলোচনার ফাঁকে অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, উদীচীর সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন, খেলাঘরের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আলী আহমেদ ও চারণের রেজওয়ানুল কবির৷ পথনাটক পরিবেশন করে প্রাচ্যনাট৷ এ ছাড়া ছবি এঁকে সাম্প্রদায়িকতা ও শিক্ষক নির্যাতন-হত্যার প্রতিবাদ জানান একদল শিল্পী৷ আলোচনা পর্ব শেষে ছিল গণসংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটকের আয়োজন৷
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, শিক্ষক নির্যাতন-হত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে তাদের উদ্যোগে শনিবার জেলায় জেলায় সাংস্কৃতিক সমাবেশ করা হবে৷ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে৷ একই দিন অভিন্ন স্মারকলিপি সব জেলায় জেলা প্রশাসকদের কাছেও দেওয়া হবে৷ এরপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সমমনা আরও সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে৷