অঙ্কুরেই শেষ ওয়াটার বাস

ওয়াটার বাসপ্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে ঢাকার চারদিকে পাঁচটি নদ–নদীকে কেন্দ্র করে রয়েছে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা—সব কটিই দখল–দূষণে বেহাল। ফলে বছরের পর বছর প্রচেষ্টাতেও নৌপথগুলো যাত্রী পরিবহনে, যানজট কমাতে  কাজে লাগানো যায়নি।

যানজট কমাতে সড়ক, রেল ও নদী—তিনটি পথই একসঙ্গে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের উন্নত শহরগুলোও গড়ে উঠেছে সেভাবেই। কিন্তু ঢাকার পুরো নৌপথ তো দূরের কথা, দফায় দফায় চেষ্টা করে সদরঘাট–গাবতলী পথ, টঙ্গী–নারায়ণগঞ্জ পথ ও শেষে বুড়িগঙ্গায় পারাপারেও ব্যর্থ যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলো পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়।

ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে তড়িঘড়ি করে চালু করা এ প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরীক্ষাটাও হয়নি। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরুর পর ক্রমাগত কোটি কোটি টাকা জলে যায়। বৃত্তাকার নৌপথ প্রকল্পের তিন পর্বের উদ্যোগে প্রথম দুটিতেই খরচ হয় প্রায় ১০০ কোটি।

মাঝে বেসরকারি উদ্যোগও কাজে আসেনি। ২০১১ সালের মার্চে ওয়াটার বাসগুলো বেসরকারিভাবে নিটল–নিলয় গ্রুপের পরিচালনায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষে বাস্তবায়নই হয়নি সেই উদ্যোগ। এরপর চালানোর কথা ছিল হাওরে—সেটির নেই অগ্রগতি।

এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় একে অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ক্রমাগত লোকসান থেকে রক্ষায় ২০১৭ সালে বিআইডব্লিউটিসি গঠিত সমীক্ষা কমিটি ১২টি পদক্ষেপের সুপারিশ করে। এর মধ্যে ছিল বুড়িগঙ্গার পানি দুর্গন্ধমুক্ত করা, প্রতি ঘাটে যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীর উভয় পাড়ে হাঁটার পথ নির্মাণ, বাসে পর্যাপ্ত লাইট–ফ্যান ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো ও অন্যান্য। তবে বাস্তবায়ন হয়নি কোনোটিই।

যেভাবে এল ওয়াটার বাস

ঢাকা শহরের যানজট নিরসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও চারদিকে নৌপথ চালুকরণ প্রকল্পের আওতায় চালু হয় ওয়াটার বাসগুলো। বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ জন্য তখন একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল, যেখানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সব মিলিয়ে শুধু রাজধানীর সদরঘাট-গাবতলী নৌপথে মোট তিনবার চালু হয় ওয়াটার বাস। প্রথম দুবার সম্পূর্ণ সরকারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (​বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে চলে। তাঁদের লোকসানের মুখে তৃতীয়বার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)।

বিআইডব্লিউটিসির নথি অনুসারে

বিআইডব্লিউটিসির নৌপথ চালুকরণ প্রকল্পের নথি অনুসারে, প্রথমবারের মতো ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে। কিন্তু মাসখানেক চলে বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ আগস্টে। এ যাত্রায় টেকে মোটে ১১ মাস। ওই বছর এই সেবা চালু রাখতে ভারত থেকে ১০টি ওয়াটার বাস আনার বন্দোবস্ত চূড়ান্ত হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। আর তৃতীয়বার শুরু হয় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। এবার উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নাম দেন ‘ওয়াটার বাস’।

এগুলো চালাতে বিভিন্ন রুটে স্থাপন করা হয় মোট ১২টি ল্যান্ডিং স্টেশন বা ঘাট।
বৃত্তাকার নৌপথের সদরঘাট-গাবতলী প্রথম পর্বের দূরত্ব ছিল ২৯ কিলোমিটার। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আশুলিয়া ও শ্যামপুর পর্যন্ত বিস্তৃত করার কথা বলা হয়। কিন্তু চালু করা যায়নি সেখানকার ব্রিজগুলো নিচু বলে। তখন রাজধানীর ১৩টি সেতু প্রতিস্থাপন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আদতে কিছুই হয়নি।

কী করছে ওয়াটার বাসগুলো?

২০১০ সালের জুলাইয়ে নামানো হয় দুটি ওয়াটার বাস, যেগুলো ৩৫ আসনবিশিষ্ট। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় আরও চারটি, প্রতিটির ৮৩ আসন। একই বছরের নভেম্বরে যাত্রা শুরু করে আরও ছয়টি, সেগুলো ৪৬ আসনের।

দেশে তৈরি ১২টি ওয়াটার বাসই সদরঘাট-গাবতলী নৌপথে প্রতি ঘণ্টায় চালানোর কথা ছিল। পরে লোকসানের মুখে দুটি সরিয়ে নিয়ে টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে চালানো হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হয়ে বছরখানেকের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। বাস দুটিকে নিয়ে আসা হয় সদরঘাটে।

বিআইডব্লিউটিসি বলছে, ওই সময় প্রতি ট্রিপে দু–তিনজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হতো। ক্ষতির মুখে ২০১৬ সালে ‘বুড়িগঙ্গা’ নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সদরঘাট–গাবতলী নৌপথে যাত্রী টানতে তারাও ব্যর্থ হয়, দেখে ক্ষতির মুখ।

এরপর সিদ্ধান্ত হয়, সদরঘাটে পারাপারে দুর্ঘটনা রোধে বন্ধ থাকবে ডিঙ্গি, চলবে ওয়াটার বাস। এ জন্য কেরানীগঞ্জ বুড়িগঙ্গা নৌকা মাঝি শ্রমিক শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ছয় মাসের জন্য আটটি ওয়াটার বাস দেওয়া হয়। তবে লোকসানে পর তারাও চারটি বুঝিয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসিকে। বাকি চারটি ওয়াটার বাস আরও এক বছরের জন্য চালানোর অনুমতি পেলেও চলছে না এখনো।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দিব্যি চলছে ডিঙ্গি নৌকা, উল্টো বন্ধ আছে ওয়াটার বাসই। বাদামতলী ঘাটে ছোট, বড়, মাঝারি আকারের ছয়টি ওয়াটার বাস ঘাটে বাঁধা অবস্থায় দেখা গেছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে ডকইয়ার্ডে মেরামতের জন্য রাখা হয়েছে তিনটি। আর দুটি চলছে চট্টগ্রামে—একটি ইয়াং ওয়ান নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অপরটি জাহাজ থেকে ঘাটে যাত্রী ওঠানো–নামানো করছে। তবে সদরঘাট-গাবতলী নৌপথে এখন একটি ওয়াটার বাসও চলছে না।

শুধু ক্ষতিই গুনতে হয়েছে

বিআইডব্লিউটিসির নথিপত্র থেকে জানা যায়, তিন দফায় উৎপাদিত ১২টি ওয়াটার বাসের উৎপাদনে খরচ হয়েছে মোট ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

শুধু ২০১৮–১৯ অর্থবছরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, সদরঘাট–গাবতলী নৌপথে আয় হয় ৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এই সময় শুধু জ্বালানি খরচই ছিল ৪১ লাখ টাকা। এর বাইরেও রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ও কর্মীদের বেতন–ভাতা।

তবে শেষ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি খরচ, বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার নির্দিষ্ট পরিমাণ জানা যায়নি।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ বুড়িগঙ্গা নৌকা মাঝি শ্রমিক শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মানবসেবার মতো। ঠিকমতো চালাতে পারছি না। তেল খরচ বেশি, দুই ইঞ্জিন।’

যে কারণে টেকেনি

নানা কারণে টিকতে পারেনি ওয়াটার বাস। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব কটি পক্ষই সবচেয়ে বেশি দুষছে নদীদূষণকে। ২০১৭ সালে বিআইডব্লিউটিসির একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনেও ১২টি কারণের মধ্যে নদীদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল। এ ছাড়া সদরঘাটমুখী যানজট, ঘাটে যাতায়াতের অনুন্নত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। বাস্তবে কচুরিপানার মধ্যে বাস আটকে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত দূষিত পানিতে চলাচল করা চ্যালেঞ্জ।...গার্মেন্টের ঝুট, পলিথিন ওয়াটার বাসের প্রোপেলারের সঙ্গে আটকে যেত।’

এ ছাড়া সদরঘাট–গাবতলী নৌপথের পাশ ঘেঁষা বেড়িবাঁধ ওয়াটার বাসে লোকসানের অন্য আরেকটি কারণ। বেড়িবাঁধ ধরে চলা বাসে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগে ঘণ্টাখানেক সময়, যেখানে ওয়াটার বাসে যেতে লাগত দেড় ঘণ্টার মতো। তাছাড়া একটু পরপর বাস ও যেখানে–সেখানে ওঠানো-নামানোর সুবিধা তো রয়েছেই।

বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি সূত্র অভিযোগ করেছে, অন্য নৌযানমালিকদের স্থানীয় সিন্ডিকেট ওয়াটার বাস পরিবহনে একটি বড় বাধা ছিল। ওয়াটার বাসের গতিতে অন্য নৌযানগুলোর সমস্যা হয়—এ অভিযোগে বসিলা ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় কয়েকবার ওয়াটার বাস আটকে দিয়েছিলেন স্থানীয় ট্রলার, নৌকা ও বালুবাহী বাল্কহেডের মালিক-শ্রমিকেরা। এমনকি বাসগুলোতে ঢিল মারার ঘটনাও ঘটেছে।

তাঁদের ক্ষোভের মুখে বসিলাতে যাত্রী ওঠানো-নামানো করতে পারত না বলে অভিযোগ তাঁদের। এরপর উল্টো বসিলার বাসিন্দারা একটা ডিও লেটার (অনানুষ্ঠানিক পত্র) দিয়েছিল ওয়াটার বাসের গতিতে নদীর পাড় ভাঙার অভিযোগ এনে।

যাত্রীর অভাবে সময়মতো বাসগুলো ছাড়তে না পারা অন্যতম আরেকটি কারণ। নাব্যতা–সংকটে কম উচ্চতার সেতুগুলো বর্ষায় ওয়াটার বাস চলাচলে আরেকটি বাধা হিসেবে কাজ করত বলে অভিযোগ বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের।

এ ছাড়া টঙ্গী–নারায়ণগঞ্জ রুটে দু–তিনজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হতো বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান।
সর্বশেষ নদী পারাপারেও লাভের মুখ দেখেনি ওয়াটার বাসগুলো। কেরানীগঞ্জ বুড়িগঙ্গা নৌকা মাঝি শ্রমিক শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশি লস হয়ে গিয়েছিল। (জনপ্রতি) ভাড়া ছিল ১০ টাকা করে। নৌকার ভাড়াও ১০ টাকা। ছাড়েও ঘন ঘন।’

মনির হোসেন বলেন, ‘ইঞ্জিনে সমস্যা বেশি দেখা দেয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান তো।...এটাতে (ওয়াটার বাসে) সব যন্ত্র অত্যাধুনিক, হাইড্রোলিক। এত অত্যাধুনিক জিনিস লং রুটের জন্য বেশি উপযোগী।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটে যেতে বেড়িবাঁধের আটকে রেখিছিল হকাররা। সেখানে পণ্য ওঠানো–নামানো করার কাজে ব্যস্ত ট্রাক-ভ্যানের দখলে ছিল রাস্তা। ফলে তা যাত্রীদের জন্য ব্যবহারের একেবারেই উপযোগী ছিল না।

ব্যর্থতায় পারস্পরিক দোষারোপ

চক্রাকার ওয়াটার বাসের ব্যর্থতায় সমস্যা সমাধানের চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ব্যস্ত একে অপরকে দোষারোপে। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিআইডব্লিউটিএর করা ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো বাসস্ট্যান্ডের কাছে না, যাত্রীবান্ধব না। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের কাজ ঠিকমতো করেনি।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দূষণ কমে গেলে, আশা করা যায় আমরা আবার চালাতে পারব। বিআইডব্লিউটিএ নদী ঠিক করে দিলে আমরা চালাব।’

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বলেন, ‘ওয়াকওয়ে ও অন্যান্য সুবিধা দেবে বিআইডব্লিউটিএ। আমরা ওয়াটার বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা সব দেননি। বিআইডব্লিউটিএ পন্টুন, নাব্যতা দেবে। কিন্তু সেভাবে দিতে পারেনি।’

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে যেহেতু খাল, তাই নদীতে জমে থাকা ময়লাগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব তাদের।

কমডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘নাব্যতা–সংকট নেই। অন্যান্য কার্গো আসছে এই পথে। কয়েক দিন আগে মেট্রোরেলের ভেসেলও এল। নাব্যতা–সংকট থাকলে কার্গো জাহাজগুলো চলছে কীভাবে? দূষণটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ।’

মূল কাজই হয়নি

সরকারের সব কটি পক্ষই জোর দিচ্ছে নদীদূষণ রোধে। কিন্তু সে কাজটিই হচ্ছে না। মাঝে শুধু ট্যানারি সারানো ছাড়া আর কোনো উদ্যোগই নেই।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের (পরিবেশ অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি রেগুলেটরি বডি (তদারকি প্রতিষ্ঠান)।...এখানে স্থানীয় সরকার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এসব করবে। তবে নদীদূষণের কারণে বহু কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র বন্ধ করে দিয়েছি।’

অন্যদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন তাঁরা দূষণ নিয়ে কাজ করেন না।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্জ্য দেখে সিটি করপোরেশন। তবে চক্রাকার নৌপথে ওয়াটার বাসের চলাচলের সুবিধায় ঢাকার কোনো ব্রিজ উঁচু করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় নৌ, সড়ক, রেল নিজের মতো করে কাজ করে। অথচ ওয়াটার বাস চালু করতে একটি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সেটি না হওয়ায় ওয়াটার বাস প্রকল্প স্থায়ী হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনবার অর্থয়ন করা হয়েছে। টাকা দিচ্ছেই দিচ্ছেই।... এখানে দায়বদ্ধ কেউ না। (ঢাকার চারপাশে) নৌপথের অমিত সম্ভাবনা ছিল। নিজস্ব জিনিস দিয়ে সুন্দর বাসযোগ্য একটা শহর তৈরি করতে পারতাম। তবে সেই যোগ্যতা আমাদের নেই।’