‘অবহেলা ছিল না, তবে দায় এড়ানো যায় না’

শিশু
প্রতীকী ছবি

মৃত ঘোষিত নবজাতকের কবরস্থানে গিয়ে নড়াচড়া করার ঘটনা এবং শিশুটির এখনকার অবস্থা নিয়ে কথা বলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, জন্মের পর নবজাতককে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। এই সময়ের মধ্যে তার কোনো স্পন্দন পাওয়া যায়নি। নবজাতককে মৃত ঘোষণায় চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিল না।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে কবরস্থানে নড়ে ওঠা নবজাতকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মেয়েশিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ নিয়ে বাবা ইয়াসিন নবজাতককে নিয়ে যান আজিমপুর কবরস্থানে। দাফনের খরচ পোষাতে না পেরে সেখান থেকে নবজাতককে নিয়ে যান রায়েরবাজার কবরস্থানে। কবর খোঁড়ার কাজ চলার সময় নবজাতকটি নড়ে ওঠে এবং কাঁদতে থাকে। তখন ইয়াসিন তাকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসেন।

এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চাটির স্পন্দন ছিল না। আমাদের চিকিৎসকদের নেগলিজেন্সি ছিল না।

তাঁরা ৪৫ মিনিট অবজারভেশনে রেখেছেন, তারপরও কোনো স্পন্দন না পেয়ে মৃত ঘোষণা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাচ্চাটি কবরস্থানে গিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে, তাই এর দায়ভার এড়ানো যায় না। এ ঘটনায় গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিছু সুপারিশ রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন তোলেন, নড়েচড়ে ওঠার পর শিশুটিকে যখন দ্বিতীয়বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে আনা হয়, তখন সেখানকার কেউ কেউ তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে বলেছিলেন। হাসপাতালে দ্বিতীয় দফায় ভর্তি হতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় কেটে যায়। এটা কেন হলো? জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যে বা যারা অবহেলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নবজাতক ইউনিটে সব আসন সব সময় ফাঁকা থাকে না। তারপরও তিনি যখন বিষয়টি জানতে পারেন, তখন বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এ জন্য অপেক্ষাকৃত সুস্থ একটি শিশুকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়।

কমিটির ও নবজাতক ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নবজাতকের বেঁচে যাওয়া যেমন একটি ‘মিরাকল’, তেমনি তাকে বাঁচিয়ে রাখাও ‘মিরাকল’। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৮ সপ্তাহের নিচে কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর এই শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে ২৬ সপ্তাহে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার সব রকম চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। তার অবস্থা একটু ভালোর দিকে। তবে এখনো সে আশঙ্কামুক্ত নয়। বর্তমানে নবজাতকটি অক্সিজেন চলছে, পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। আর দু–এক দিন পর অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া হবে।

তবে এ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায় বলেও জানান মনীষা চক্রবর্তী। তিনি শিশুটির জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, উপপরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।