আউশ-আমনে ছয় লাখ টন উৎপাদন কমবে

ধানখেতের আইল ধরে আউশ ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন কৃষক।
ফাইল ছবি

এ বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দেশে চালের উৎপাদন ছয় থেকে সাত লাখ টন কম হতে পারে। আউশ ও আমনের মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হওয়ায় উৎপাদন কমার এই আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর। উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের চালের বাজারে ক্রেতা হতে যাচ্ছে বলে সংস্থাটির খাদ্যবিষয়ক দুটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ‘বিশ্ব কৃষি উৎপাদন-২০২০’ ও ‘দানাদার খাদ্যের বাজার ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন দুটিতে বলা হয়েছে, বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মুখে পড়ে। এরপর দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টির শিকার হওয়ায় এবার বাংলাদেশের আমন ও আউশের উৎপাদন কম হবে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চাল কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টন চাল কেনার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আগামী সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চাহিদা অনুযায়ী চাল আমদানি হতে পারে।

আমরা সরকারি গুদামে চালের মজুত বাড়াতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টন চাল বিশ্ববাজার থেকে কেনা হবে।
সারওয়ার মাহমুদ, মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর

খাদ্য অধিদপ্তর মনে করছে, চালের বিশ্ববাজারের দর অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে ভারতে। আমদানি খরচ যোগ করলে সেখান থেকে চাল বাংলাদেশে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি কেজির দাম পড়বে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা। থাইল্যান্ডের দর সেখানে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, ভিয়েতনামের চাল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজি ও পাকিস্তানের চাল ৩৭ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারওয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারি গুদামে চালের মজুত বাড়াতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টন চাল বিশ্ববাজার থেকে কেনা হবে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানি বাড়ানো হবে। তবে আপাতত শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতকে আমদানির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার প্রকাশ করা দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাজারে সব ধরনের চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।

এ বছর বাংলাদেশে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল ইউএসডিএ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ১১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ কম। হেক্টরপ্রতি চালের উৎপাদন ধরা হয়েছিল ৪ দশমিক ৫৩ টন। কিন্তু এটিও এবার আউশ ও আমনের মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কিছুটা কমতে পারে। সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টন উৎপাদন কমতে পারে। বৈরী আবহাওয়া এবার দেশের ৫০ শতাংশ ফসলের ওপর প্রভাব ফেলেছে বলে ‘বিশ্ব কৃষি উৎপাদন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চালের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমন ধান মাত্র কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে খবর পাচ্ছি, তাতে উৎপাদন বেশ ভালোই হয়েছে। তবে যেহেতু এবার বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে আমরা পড়েছিলাম, তাতে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আমনে কৃষককে যথাসময়ে বীজ ও উপকরণ সহায়তা দেওয়ায় ওই ক্ষতি আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি।’

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার প্রকাশ করা দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাজারে সব ধরনের চালের দাম অপরিবর্তিত আছে। মোটা চাল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, মাঝারি ৪৭ থেকে ৫০ টাকা ও সরু ৫৪ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের চালের মজুতও গত বছরের তুলনায় বেশ কমেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ১১ লাখ ৫৩ হাজার টন। বুধবার চালের মজুত ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার টন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে উৎপাদন কমলে ও সরকারি গুদামে মজুত কম থাকলে আমদানিতে যেতে হবে। কিন্তু আমদানির পরিমাণ বেশি হলে তা আউশ ও আমনের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। এখন যে দাম আছে, তাতে কৃষকেরা কয়েক বছর পর ভালো দাম পাচ্ছেন। আমদানির মাধ্যমে সেটি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়।