‘আগের মতো হলে দোকানের সামনে লাইন পড়ে যেত’

ফাইল ছবি

নিউ বেইলি রোডের মিষ্টির দোকান ‘রস’ এর ভেতরে দেখা গেল ক্রেতা মাত্র একজন, তিনি এক কেজি বালুসাই কিনছিলেন। তখন বেলা প্রায় দুটো। মিষ্টির দোকানের ব্যবস্থাপক রোকনুজ্জামান খান তেতো কণ্ঠে বললেন, ‘আগের মতো পরিস্থিতি থাকলে এ সময় দোকানের সামনে লাইন পড়ে যেত।’

আজ শনিবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বিশেষ মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের সবাই পাস। জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আগের তুলনায় তিনগুণের বেশি।

সাধারণত এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন রাজধানী ঢাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রচুর বেচাকেনা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর থেকেই ভালো ফল করা শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা মিষ্টির দোকানে আসেন প্রিয়জনকে সুখবর দিয়ে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য মিষ্টি কিনতে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের মিষ্টির দোকানগুলোতে এমন দিনে উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ জন্য এই বিশেষ দিনগুলোতে মিষ্টি প্রস্তুতকারীদের আগাম প্রস্তুতিও থাকে। প্রতিদিনের তুলনায় দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে রাখেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খ্যাতনামা মিষ্টির দোকানগুলোতে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, প্রায় ক্রেতাশূন্য পরিস্থিতি। বেইলি রোডের আশপাশে ভিকারুননেসা নূন স্কুল ও কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল ও কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এখানকার মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকে ।
রসের রোকনুজ্জামান বললেন, এসব দিনে ৩০ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত মিষ্টি চলে যায়।

দুপুর পর্যন্ত পরীক্ষার ফল উপলক্ষে কেউ মিষ্টি কিনতে আসেননি। করোনার কারণে মিষ্টির দোকানে স্বাভাবিক বেচাকেনাও খুব কমে গেছে। পরীক্ষার্থী বা তাঁদের অভিভাবকেরাও স্কুলগুলোতে তেমন আসেননি। অনলাইনেই ফল পেয়েছেন। সে কারণে এবার বিক্রি নেই।

বিজয়নগরে মুসলিম সুইটসের প্রধান বিক্রয়কেন্দ্র। দুপুরে এখানে এসে একই দৃশ্য দেখা গেল, ক্রেতা নেই। দোতলায় কারখানা ও প্রধান কার্যালয়। ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানালেন, এবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে কোনো প্রস্তুতিই তাঁরা নেননি। প্রথমত কবে ফল প্রকাশ হবে তাঁরা অনিশ্চিত ছিলেন। তা ছাড়া করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। খুব দরকার ছাড়া লোকজন এখনো ঘর থেকে তেমন বাইরে আসে না। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি পাঠানোটাও অনেকের অপছন্দ। এসব কারণে এবার পরীক্ষার ফলকে কেন্দ্র করে কোনো বিক্রিবাট্টা নেই।

ঢাকার আরেকটি খ্যাতনামা মিষ্টির প্রতিষ্ঠান বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার। জিগাতলায় বিজিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনের শাখায় বেলা আড়াইটার দিকে কথা হলো প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সৌমিত্র শেখরের সঙ্গে। তিনি মিষ্টান্নসামগ্রী প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্বাহী সদস্য। বললেন, এইচএসসির ফলকে কেন্দ্র করে তাঁদেরও কোনো প্রস্তুতি ছিল না।

সামান্য ৫-৭ কেজি মিষ্টি হয়তো বিক্রি হয়েছে। এখানে বিজিবির প্রধান কার্যালয়ের ভেতর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ। বরাবর এসএসসি বা এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনে অনেক রাত পর্যন্ত তাঁদের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তিনি বললেন, আসলে মানুষ মিষ্টি কিনতে আসে পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জনের আনন্দ উদযাপন করতে। এবার পরীক্ষাই হয়নি। তাই সবাই পাস করলেও শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কারও মনেই সেই আগের মতো আনন্দ নেই। মিষ্টির দোকানে কেউ আসছেন না।

সৌমিত্র শেখর জানালেন, রাজধানীতে তাঁদের সংগঠনভুক্ত মিষ্টির দোকান রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০। এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয়, এমন অনেক দোকান রয়েছে। এসএসসি, এইচএসসি—এই দুটো বড় পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন, পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন—এসব দিনে মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিনের স্বাভাবিক বিক্রির চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বিক্রি হয়ে থেকে। করোনার কারণে স্বাভাবিক বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। আর বিশেষর দিনের বিক্রিও নেই বললে চলে। বড়ই মন্দা চলছে মিষ্টির ব্যবসায়।