আন্দোলন থেকে আটকদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

আটক নেতা–কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ
ছবি: প্রথম আলো

লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে হওয়া আন্দোলন থেকে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।

এই কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত সা’দ, আকিফ আহমেদ ও আতিক মোর্শেদসহ গ্রেপ্তার হওয়া সব রাজবন্দীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, লেখক মুশতাকের “হত্যার” ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও এই আইনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।’ আয়োজকের স্থলে লেখা ছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’।

বিকেল চারটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হওয়া সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বহিষ্কৃত নেতা মেঘমল্লার বসু বলেন, লেখক মুশতাকের হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদে বাম সংগঠনগুলোর মশাল মিছিলে পুলিশ ন্যক্কারজনক আক্রমণ করেছে। ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটাই উদ্দেশ্য—সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশকে ঠেকানো। মেঘমল্লার অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য একজন অযোগ্য ব্যক্তি। বিভিন্ন জায়গায় শীর্ষ পদে এমন অযোগ্য লোকদেরই বসিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে আনুগত্য পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান বলেন, টিএসসি থেকে পুলিশের শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়া কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য? পুলিশ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের পেটানোর সাহস পায় কী করে! শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী আকরাম হুসাইন বলেন, মানুষের কণ্ঠরোধ ইতিহাসের অংশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি মধ্যযুগীয় সময়ে প্রবেশ করেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের মৃত্যু ঘটেছে। এই রাষ্ট্রে আজকে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। মানুষের জবান কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কর্মী রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা সাদেকুল ইসলাম ও আমজাদ হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মাঈন আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সংগঠক জাবির আহমেদ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র তুহিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বাসভবনের সামনে ‘যে ভিসি দালালি করে, সেই ভিসি চাই না’, ‘ছাত্রদের নিরাপত্তা দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও’, ‘দালাল ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তাঁদের কর্মসূচি শেষ হয়।

লেখক মুশতাক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর কারাগারে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় সেই রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। পুলিশকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার সাতজনকে কারাগারে পাঠান আদালত। শুক্রবার রাতে খুলনা থেকে বামপন্থী শ্রমিকনেতা রুহুল আমিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া গত রোববার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের তিন নেতা-কর্মীকে টিএসসি থেকে আটক করেছে ‘সাদাপোশাকের’ পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান খন্দকার, স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার জিসান ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার কর্মী আতিক মোর্শেদ। এই তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না বলে দাবি ছাত্রদলের।