আমরাও অসহায় হয়ে যাই: অ্যাম্বুলেন্স প্রসঙ্গে ঢামেক পরিচালক

অ্যাম্বুলেন্স
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের অব্যবস্থাপনা ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত দালালদের কাছে ‘অসহায়’ হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক। আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালটির সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ অসহায়ত্বের কথা জানান হাসপাতালটির পরিচালক।

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘ঢামেকের ইমার্জেন্সিতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খুব হযবরল অবস্থা থাকে, মনে হয় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। এমন অবস্থা যেন এখানেই ট্রাফিক সিগনাল, এখানেই যানজট লেগে আছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো দাঁড় করিয়ে খুলে রাখে। রোগীর গাড়ির পার্কিং করার জায়গা নেই, হাঁটার জায়গা নেই। মুমূর্ষু রোগীরাও ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারেন না। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কিচ্ছু নেই।

কিছু ব্যক্তি আছেন, লাঠি নিয়ে কেবল লাইন মেইনটেইন করেন। কিন্তু রোগীরা ঢামেক হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে যান। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। আজও এ ভয়াবহ অবস্থা দেখেছি।’

জবাবে ঢামেক পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘এটা বাস্তব চিত্র। আমরাও অনেক সময় অসহায় হয়ে যাই। আমি যখন যাই, তখন আমার টেম্পার ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমি নিজে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর চাকা পাংচার করেছি, লোকজন দিয়ে করিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা আমরা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আসলে সাময়িক চেষ্টায় হচ্ছিল না। আমি বলব যে যুগ যুগ ধরে এভাবে দৌরাত্ম্য চলে আসছিল।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কাজ চলছে উল্লেখ করে নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা অ্যাম্বুলেন্সগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করব। আমরা একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আমরা ১০০ অ্যাম্বুলেন্স রাখার জায়গা করে দেব। আপনারা কেউ তা দেখতে পাবেন না। কোনো রোগীর অ্যাম্বুলেন্স দরকার হলে আমাদের বুথ থাকবে, সেখানে যোগাযোগ করে অ্যাপসের মাধ্যমে তা নেবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘৫ জানুয়ারি আমাদের এখানে ৩৭ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিল। আজ ২৯ জানুয়ারি করোনা রোগী ভর্তি আছে ২১৫ জন। এটা প্রায় ছয় গুণ বেশি রোগী ভর্তি আছে। প্রথমে একটা ফ্লোরে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া হতো। তারপর দুটি ফ্লোরে দেওয়া হয়েছে। এখন তিনটি ফ্লোরে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার দিকে যাচ্ছি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. টিটো মিঞা বলেন, ঢামেকে এখন অমিক্রনের রোগী বেশি। যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগের অক্সিজেন লাগছে না। গতবারের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের রোগীরা আপার রেসপারেটরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা অনেক কম। যেটা গতবার ডেলটাতে বেশি ছিল। এবার অক্সিজেন লাগার হার অনেক কম। ৪৫ শতাংশেরও অক্সিজেন লাগে না। যাঁদের হার্ট ফেইলিওর বা ফুসফুসে অন্য সমস্যা আছে, তাঁদের লাগছে। এবার অমিক্রনে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা কো–মরবিডিটি নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। গতবার তরুণেরা বেশি ভর্তি হতেন, তাঁদের ফুসফুসে বেশি সমস্যা ছিল, এবার বেশির ভাগ বয়স্ক রোগী।

ঢামেক হাসপাতালের ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, এ এক বছরে ৭৬ হাজার ৩২৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ হাজার ৯৪১ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ হাসপাতালটিতে দিনে ২৪ জন করে মারা গেছেন।
পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের এখানে ২০০–২৫০ রোগী ভর্তি হয়।

তাদের মধ্যে প্রতিদিন ২৫ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর হার প্রায় ১০ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি। তারপর এখানে আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ আছে। আমরা সেদিকে নজর দেব। এই এক বছরে ঢামেক ১৭ হাজার ৬৪১ জন করোনা রোগীর সেবা দিয়েছে।’