‘আমি যে রিকশা চালাই, বাড়ির কেউ জানে না’

প্রতীকী ছবি

‘দয়া করে ছবি তুলবেন না ভাই। আমি যে রিকশা চালাই, বাড়ির কেউ জানে না। পত্রিকায় ছবি ছাপলে বাড়ির লোকজন এবং আত্মীয়রা আমাকে চিনতে পারবে। এত পরিশ্রমের কাজ করি জানলে সবাই কষ্ট পাবে। সবাই জানে আমি জুতার কারখানায় কাজ করি। তা ছাড়া আমি কয়েক মাস রিকশা চালিয়ে আর চালাব না। অন্য কাজ করব।’

করোনাভাইরাসের মহামারিতে কাজ হারিয়ে এখন রিকশা চালাচ্ছেন শ্রমজীবী সুমন (ছদ্মনাম)। কঠোর এই বিধিনিষেধের মধ্যে জীবন–জীবিকা কীভাবে চলছে, তা নিয়ে কথা বলার ফাঁকে ছবি তুলতে চাইলে উল্লিখিত মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় কথা হচ্ছিল সুমনের সঙ্গে। ভোলার তজুমদ্দিনে বাড়ি। মা আর ছোট ভাই গ্রামের বাড়িতেই থাকে। আট বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া সুমনের। গ্রামের বাজারে দরজির কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। পরে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় এসে জুতার কারখানায় কাজ নেন। জুতা বানানোর কাজ শিখেছেন। কিন্তু করোনা মহামারির শুরুতে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন।

শেষে এক পরিচিতের মাধ্যমে রিকশা চালানো শুরু করেন। সুমন বলেন, আগে একটি ছোট বাসা নিয়ে মেস বানিয়ে কয়েকজন মিলে থাকলেও এখন রিকশার গ্যারেজেই থাকেন। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। সাধারণত বিধিনিষেধের মধ্যে অল্প দূরত্বে ভাড়া পাওয়া যায় না। লম্বা দূরত্বে যেতে হয় বিধায় অনেক কষ্ট হয়। আর তিন–চার মাস রিকশা চালাব।

সুমন জানান, সারা দিন রিকশা চালালে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো আয় হয়। প্রতিদিন ১০০ টাকা মালিকের জমা এবং খাওয়ায় ২০০ টাকা লাগে। তবে আগে তিন বেলা খাওয়ার জন্য টাকা কম খরচ হতো বলে জানান তিনি।

সুমন জুতার কারখানায় কাজ করে দুই লাখ টাকা জমা করে রেখেছিলেন। করোনা মহামারির মধ্যেই অন্য একটা চাকরি নিতে হবে জানিয়ে এই তরুণ বলেন, ‘জমানো টাকা বিয়ের সময় খরচ করব।’

এই তরুণ আরও জানালেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করেন না। তা ছাড়া অর্থনৈতিক দৈন্যে থাকলেও আত্মসম্মানবোধের চিন্তা করে জনপ্রতিনিধি বা অন্য কারও সাহায্য-সহযোগিতা আশা করেন না বলেও জানান তিনি।