‘আর কোনো মা–বাবার বুক যেন খালি না হয়’

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে মেয়েটির পরিবার। মেয়েটির মা–বাবা ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘আমাদের মতো আর কোনো মা-বাবার বুক যেন খালি না হয়।’ মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করে, তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের মেয়ের চরিত্রহননের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন। কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়েটির মা সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘৭ জানুয়ারি আমার মেয়েকে অপহরণ করে দিহান ও তার সঙ্গীরা তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করে আমাকে ফোন করা হয়।

হাসপাতালে গিয়ে দেখি, দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। দিহান আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে আন্টি আমাকে বাঁচান।’

মেয়েটির মা অভিযোগ করেন, তাঁরা যেভাবে মামলাটি করতে চেয়েছেন, পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তাঁর সঙ্গীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে এবং তাঁর মেয়ের চরিত্রহননের চেষ্টা করছে। আসামির বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আর কোনো মা যেন এমন কষ্ট না পায়। কোনো মেয়েকে যেন এমন অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে না হয়।

সরকারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানান তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে—প্রভাবমুক্ত থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার করা, মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা, একটি স্বচ্ছ ডিএনএ পরীক্ষা করা এবং তাঁর পরিবারকে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেটির ব্যবস্থা করা।

মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার একটাই চাওয়া, আমি যা হারিয়েছি, তা যেন আর কোনো মা-বাবা কখনো না হারায়।’

৭ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। কলাবাগান থানার পুলিশ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে গিয়ে ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহান নামের ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে তরুণটির তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাঁদেরও আটক করে। ওই দিন রাতেই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। আটক দিহানকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৮ জানুয়ারি দিহান আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইডের পরিচালক মাকছুদা আখতার। তাতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে হেয় প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের শুরুতেই অনভিপ্রেত বক্তব্য নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন যৌন অপরাধে কিশোর–তরুণদের সম্পৃক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, শিশু, কিশোর ও তরুণদের মানসিক বিকাশ উপযোগী কার্যক্রম বাড়াতে হবে, ধর্ষণ ও যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজননশিক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাসহ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ক্ষমতা ও অপরাধ হাত–ধরাধরি করে চলছে। ক্ষমতার দাপটে অপরাধ করলেও বিচার হচ্ছে না। দিহানের এই পথে যাওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দায় মেনে নিতে হবে। যেকোনো নারী ধর্ষণ বা নির্যাতনের ঘটনায় ‘ভিকটিম ব্লেমিং’ (ভুক্তভোগীর দোষ খোঁজা) বন্ধ করতে হবে।

ভুক্তভোগী মেয়েটির মায়ের তোলা একটি ছবি দেখিয়ে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, চিকিৎসক বলছেন, ময়নাতদন্তে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু মায়ের তোলা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েটির পিঠে কালশিটে দাগ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সহসাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাবুন নেসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস।