ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, ৪ বন্ধু আটক

প্রতীকী ছবি
প্রথম আলো

রাজধানীর কলাবাগানে বৃহস্পতিবার ইংরেজি মাধ্যমপড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ওই ঘটনায় নিহত ছাত্রীর চার বন্ধুকে আটক করেছে।


পুলিশ বলেছে, স্কুলছাত্রীর শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। আটক চারজনের মধ্যে এ লেভেল পরীক্ষা দেওয়া এক তরুণ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। নিহত ছাত্রীটি রাজধানীর নামকরা একটি ইংলিশ মাধ্যম স্কুলে পড়ত।


স্কুলছাত্রীর পরিবার বলেছে, ধর্ষণের পর ওই মেয়েকে হত্যা করেছে বখাটেরা।  
নিউমার্কেট অঞ্চলের পুলিশ বলেছে, গতকাল দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তখন নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে কলাবাগান থানার পুলিশ আনোয়ার খান হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে তরুণটির তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাঁদেরও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে স্কুলছাত্রীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

পুলিশের এসি আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক এ লেভেল পরীক্ষা দেওয়া ওই তরুণ দাবি করেছেন, মেয়েটি তাঁর পূর্বপরিচিত। বাসার সবাই ঢাকার বাইরে থাকার সুযোগে তাকে ডলফিন গলির তাঁদের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।


পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণকারী তরুণের বাবা সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার। ভবনটি এক ইউনিটের। তরুণের বাবা দোতলার ফ্ল্যাটটির মালিক। আশপাশের লোকজন ঘটনা সম্পর্কে কিছুই টের পাননি বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে।
সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মেয়েটির মা। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। স্বজনেরা তাকে ধরাধরি করে থানার দোতলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে বসান। তিনি বিলাপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বেলা ১১টার দিকে মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে, “মা, আমি বান্ধবীর বাসায় নোট শিট আনতে গেলাম।” তখন আমি কর্মস্থলে। বেলা একটার দিকে শিহান (ছদ্মনাম) নামের এক তরুণ আমাকে ফোন করে বলে, আপনার মেয়ে অচেতন হয়ে গেছে। তার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আপনি আনোয়ার খান মডার্নে আসেন। তখন আমি ওই ছেলের কাছে জানতে চাই আমার মেয়ে কোথায় গিয়েছিল। সে জানায়, তার বাসায়। বাসায় কেউ ছিল কি না জানতে চাইলে ছেলেটি না–সূচক জবাব দেয়।’

মেয়েটির মা বলেন, বখাটে ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর তার বুঝতে আর কিছু বাকি থাকে না। তিনি দ্রুত হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তাঁর মেয়েকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। দেখা যায়, তার কাপড়চোপড়ে রক্তমাখা।
স্কুলছাত্রীটি দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা ব্যবসায়ী। তাদের বাসা রাজধানীর সোবহানবাগে।
মেয়েটির মা অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। ওই বখাটে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মেয়েকে কৌশলে বাসায় নিয়ে ওই বখাটেসহ চারজন মিলে ধর্ষণ করেছে। হয়তো বাধা দেওয়ায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। মেয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তিনি।