ইমিগ্রেশনে পদে পদে দুর্ব্যবহার

আগমনী ইমিগ্রেশনের চেয়ে বহির্গমনের ইমিগ্রেশনে যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

  • বিদেশে ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের ‘স্যার’ সম্বোধন করা হলেও শাহজালালে চলে ‘তুই–তোকারি’।

  • খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।

ফাইল ছবি

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে বাজে আচরণের শিকার হচ্ছেন বিদেশগামীরা। বিমানে ওঠার আগে বহির্গমনের ইমিগ্রেশনে এসে দীর্ঘ সারিতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। তবে আগমনী ইমিগ্রেশনে এ অভিযোগ কম। যাত্রীরা বলছেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের যাত্রীদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ করেছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে রাতে আট ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দিনের বেলায় বেড়েছে যাত্রীর চাপ। এক ঘণ্টায় কয়েকটি ফ্লাইট একসঙ্গে উড্ডয়নের সূচি থাকলে বহির্গমন ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। আগমনী ইমিগ্রেশনে যাত্রীর চাপ থাকলেও এখানকার অব্যবস্থাপনা কিছুটা কম।

বিদেশগামীদের অভিযোগ, ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্মকর্তারা কাউন্টারে কখনো অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে হয়রানি করেন। যাত্রীরা কোনো প্রশ্ন বা অনুরোধ করলে কখনো ‘তুই–তোকারি’ বা গালিগালাজও করা হয়। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কারণে কখনো যাত্রীদের ফ্লাইট মিসও হচ্ছে। বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার বরিশালের আরিফুল ইসলাম ২২ নভেম্বর সৌদি আরব যান। মুঠোফোনে আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ফ্লাইট ছিল রাতে। আমি যখন ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে টিকিট চেকের জন্য যাই, তখন দুজন পুলিশ আমাকে দুদিকের কাউন্টার থেকে ডাকে। আমি একজনের কাছে গেলে অন্যজন আমাকে গালি দিয়ে বলে, তুই ওদিকে কেন গেলি। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে এমন আচরণ অনেক কষ্ট লাগে।’

ময়মনসিংহের বাসিন্দা মো. ওমর সানি কাজের সূত্রে থাকেন সিঙ্গাপুর। গত ডিসেম্বরে দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছেন ইমিগ্রেশন পুলিশের বাজে আচরণের অভিজ্ঞতা। ওমর সানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব কাগজ নিয়ে ইমিগ্রেশন কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ওই কর্মকর্তা তুই সম্বোধন করে সব কাগজ দেখতে চাইলেন। আমি একটা কাগজ বেশি দিয়ে ফেলি। এ সময় ওই পুলিশ শালার বেটা এত বের করছিস কেন বলে সব কাগজ ছুড়ে ফেললেন। তাঁকে প্রশ্ন করলাম, কোনো জবাব দিলেন না। সিঙ্গাপুরের ইমিগ্রেশনে যখন গেলাম, তাঁরা আমাকে স্যার সম্বোধন করে আমার সব কাগজ দেখতে চাইলেন। তিনি দরকারি কাগজগুলো রেখে বাকিগুলো ফেরত দিলেন। এই হচ্ছে পার্থক্য।’

যাত্রীদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ ধীরে ধীরে কমে আসছে দাবি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, যাত্রীদের ভালো ব্যবহার ও ভালো সেবা দিতে নজর দেওয়া হচ্ছে। যেসব ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর বোর্ডিং, চেক ইন, ইমিগ্রেশনসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে এখন লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, শীতকালীন সূচি ও তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের জন্য বিমানবন্দরে রাতের ফ্লাইট এখন দিনে ওঠা–নামা করছে। ২৪ ঘণ্টার ফ্লাইটসূচি ১৬ ঘণ্টায় আসায় বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের আচরণ নিয়ে বিদেশগামীদের অভিযোগ বেশ পুরোনো। তবে ফ্লাইটসূচির এই পরিবর্তনে যাত্রীর চাপ বাড়ায়, ইমিগ্রেশন পুলিশের আচরণ নিয়েও অভিযোগ বেড়েছে।

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে বহির্গমন ও আগমনী টার্মিনালে ৮৮ জন ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য কাজ করেন। বহির্গমন ও আগমনী টার্মিনালে দিনে দুটি সময়ে চাপ বেশি থাকে। একটা হচ্ছে বিকেলে, আরেকটি হচ্ছে সকালের দিকে। এই দুই সময়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার যাত্রী একবারে ইমিগ্রেশনে আসেন। সে সময় যাত্রীর চাপে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।

জানতে চাইলে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এক থেকে দুই মিনিটের বিরতি নেন। টানা আট ঘণ্টা বসে হাজারো যাত্রীর কাগজ দেখাও একটি কঠিন বিষয়। যাত্রীর চাপের ওপর কর্মকর্তা বাড়ানো–কমানো হয়। কখনো ৩০ মিনিটের মধ্যে হাজার মানুষের ইমিগ্রেশন শেষ করতে হয়।

যাত্রীদের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আসবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।