বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান।
ছবি : সংগৃহীত

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।

মুক্ত আসর ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির আয়োজনে সমাপনী অনুষ্ঠানে আনিসুল হক বলেন, ‘বিদ্যাসাগর নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০ বছর পর বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করছি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি কত মহান ছিলেন। বিদ্যাসাগরের চর্চার মাধ্যমে জানা, বোঝার, পড়ার এক বিস্তারিত জগৎ খুলে যায়। ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে মোকাবিলা করতে হবে। বিদ্যাসাগরের কাজগুলো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি আমাদের মনের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করতে যে আগুনটা দরকার, সেই আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের মনের বিপ্লবী।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আজকের দিনে বাংলাদেশে যেভাবে নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিত  হচ্ছে, শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে, এই জায়গায়টিতে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো সবাইকে যদি পাশে পাই, তাহলে তাদের সুস্থ, সুন্দর, অনেক গৌরবময় করে তুলতে পারব। আমরা মনে করি, আমাদের চেতনার আলোয় আলোকিত হবে আমাদের প্রজন্ম।’

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘চমৎকার ও সুসম্পন্নভাবে শেষ হলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সবাইকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বিদ্যাসাগর অনেক বড় একজন বিপ্লবী ছিলেন। তিনি আমাদের মনের মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করতে যে আগুনটা দরকার, সেই আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের মনের বিপ্লবী।’
আনিসুল হক, কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান।
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবেদা সুলতানা বলেন, ‘২০০ বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্ম নিলেও আজও তিনি আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলো আমরা পালন করছি। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নারীদের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এটা বিদ্যাসাগর অনুধাবন করেছিলেন বলে তিনি নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের ক্ষতিকর বিষয়টি। বিদ্যাসাগরের দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব।

ভারতের ‘উদার’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেন নারী শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন, তা আমরা ভারতে গবেষণা করে দেখেছি। যে পরিবারে একজন মা মাধ্যমিক পাস করেছেন, সেই পরিবারে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছে। মা যদি শিক্ষিত হন, সমাজ আলোকিত হয়। নারী শিক্ষার প্রসার-প্রচার এখনো প্রয়োজন আছে। বিদ্যাসাগর যে নারী শিক্ষার কথা বলেছেন, সেটার ওপর জোর দিতে হবে। বিদ্যাসাগর সমগ্র মানবজাতির জন্য কাজ করেছিলেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চিকিৎসক আহমেদ হেলাল, প্রশিক্ষক কাজী সামিও শীশ, সাধারণ সম্পাদক ও মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবু সাঈদ, ভারতের প্রকাশনার সংস্থা উদার আকাশের প্রকাশক ও সম্পাদক ফারুক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাইফুল্লাহ সাদেক, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস শুভা প্রমুখ।

আজকের দিনে বাংলাদেশে যেভাবে নারীরা নির্যাতিত, ধর্ষিত হচ্ছে, শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে, এই জায়গায়টিতে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো সবাইকে যদি পাশে পাই, তাহলে তাদের সুস্থ, সুন্দর, অনেক গৌরবময় করে তুলতে পারব। আমরা মনে করি, আমাদের চেতনার আলোয় আলোকিত হবে আমাদের প্রজন্ম।
সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষ করে অনলাইনে ‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক শিরোনামে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক পবিত্র সরকার।
ছবি : সংগৃহীত

চার দিনের এই সম্মেলনে ৩টি দেশ থেকে ১১ জন খ্যাতিমান গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপনা করা হয়।

মূল প্রবন্ধ পড়েন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রাক্তন অধ্যাপক ধর্মদাস ঘোষ।

চার দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রবন্ধ পড়েন ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক পবিত্র সরকার, গবেষক ও লেখক ড. অমিয় কুমার সামন্ত, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রাজকুমার কুঠারী, কল্যাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরুণ কুমার চক্রবর্তী, গবেষক বিনয় কুমার রায়চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে থেকে কবি শামীম আজাদ, গবেষক মোহাম্মদ আবদুল হাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ রেজাউল করিম ও মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. কুদরত-ই-হুদা।

‘২০০ বছরে বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সহযোগিতায় ছিল স্বপ্ন ‘৭১ প্রকাশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ, উদার আকাশ ও সিনু।