উচ্ছেদ নদীতে, ধর্মঘট সড়কে

তুরাগতীরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ট্রাকস্ট্যান্ড অপসারণ। গত ২৬ আগস্ট মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়ফাইল ছবি

মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগ নদের জায়গা উদ্ধারে গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত চার দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতিবারই অভিযান শেষে উদ্ধার করা জায়গায় ট্রাকস্ট্যান্ড বসত। চতুর্থ দফার অভিযানে সেখানে থাকা নষ্ট ট্রাক ধ্বংস করা হয়, আর ৮টি ট্রাক জব্দ করে তা নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন ক্ষতিপূরণের দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।

১২ ও ১৩ অক্টোবর দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ধর্মঘট ডেকে নদ-নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল।

গত ২৬ আগস্ট মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগতীরে বিআইডব্লিউটিএর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ছিল। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখতে পান, উদ্ধার করা জায়গায় আবারও ট্রাকস্ট্যান্ড ও ওয়ার্কশপ গড়ে তোলা হয়েছে। তখন বিআইডব্লিউটিএ মাইকিং করে এসব সরিয়ে নিতে বললেও কোনো কাজ হয়নি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন। তাঁদের ৯ দফা দাবির মধ্যে প্রধান দুটি দাবি হচ্ছে আকস্মিক অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং অভিযানে থাকা কর্মকর্তাদের অপসরণ ও শাস্তি দিতে হবে। আরেকটি দাবি, বিআইডব্লিউটিএর বিভিন্ন ফেরিঘাট ও টার্মিনাল ঘাট ইজারা দেওয়া বন্ধ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করতে হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, বিনা নোটিশে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁরা সেখানে স্থায়ীভাবে গাড়ি রাখেন না। সাময়িক সময়ের জন্য রাখেন। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই এলাকায় সরকারি কোনো ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় তুরাগতীরে অস্থায়ীভাবে ট্রাক রাখা হতো। নদীর জায়গা দখল করার উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আবারও বসা হবে।

তবে নদী দখলদারেরা এখন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন বলে মনে করেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। নাম না প্রকাশের শর্তে সংস্থাটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ওই এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতা এই কর্মসূচিতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। তুরাগতীরের জায়গা ওই নেতার দখলে ছিল। সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তা দখলমুক্ত করা হয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হন।

বিআইডব্লিউটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, যাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাঁদের সঙ্গে ইতিমধ্যে ট্রাকমালিকদের বৈঠক হয়েছে। ভবিষ্যতে নদীর জায়গায় আর পার্ক করা যাবে না এমন শর্তে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আইনগতভাবে তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এই শর্ত মেনেও নিয়েছেন। এরপরও ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা না দেওয়ার পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, নদীর জায়গা থেকে ট্রাক সরানোর জন্য বারবার বলা হয়েছে, মাইকিং করা হয়েছে, নিলাম ডাকার আগেও গাড়ি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সরানো হয়নি। এই ইস্যুতে ধর্মঘটে যাওয়া বেআইনি।