উত্তর-দক্ষিণ ভুলে দুই টিকাকেন্দ্র ফাঁকা

সুরক্ষা ওয়েবসাইটে ঢাকা উত্তর সিটির একটি টিকাকেন্দ্রের নাম এসেছে দক্ষিণের তালিকায়। আর দক্ষিণের একটি কেন্দ্র পড়েছে উত্তরে।

হাজারীবাগ মাতৃসদন হাসপাতালে টিকা নিতে আসা ও টিকা গ্রহনের পরবর্তী অপেক্ষায় সাধারন মানুষ। হাজারীবাগ, ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি
ছবি: দীপু মালাকার

আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। কিন্তু সরকারের করোনার টিকা নিবন্ধনের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ সুরক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কেন্দ্র (ডিএনসিসি) হিসেবে।

আবার মিরপুর মাজার রোডের লালকুঠির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট উত্তর সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। কিন্তু করোনার টিকাকেন্দ্রের তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ সিটির কেন্দ্র হিসেবে দেখানো হয়েছে।

দেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দেওয়া শুরু হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে কোভিড-১৯ টিকা প্রথম ডোজ গ্রহণের ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে।
জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই ভুলের কারণে দুটি কেন্দ্র অনেকটা ফাঁকা থাকছে। যদিও চাপ বেশি আশপাশের কেন্দ্রগুলোতে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই ভুল না হলে আশপাশের কেন্দ্রগুলোতে চাপ কিছুটা হলেও কম হতো।

দেশে করোনার গণটিকাদান শুরু হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইট ও অ্যাপে ঢাকার কোন সিটির বাসিন্দা, তা নির্বাচন করতে হয়। এই নিবন্ধন করতে গেলে ওয়েবসাইটে দক্ষিণের তালিকায় আজিমপুরের মাতৃসদন এবং উত্তরের তালিকায় লালকুঠির শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নাম পাওয়া যায় না।

প্রতিষ্ঠান দুটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রের ভুল ঠিকানার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও করোনাবিষয়ক মুখপাত্র মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। দ্রুত সুরাহার ব্যবস্থা করা হবে।

আজিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার অন্য কেন্দ্রগুলোতে চাপ অনেক বেশি। হাজারীবাগ পার্ক এলাকার মাতৃসদনে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে তারিখ পাওয়ার অপেক্ষায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।

লালকুঠির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে গতকাল টিকা দেওয়া হয়েছে ৬০ জনকে, যা ঢাকার ভেতরের ৪৭টি টিকাকেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ, এই কেন্দ্রটিতে দৈনিক দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া সম্ভব। গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ৬৯৫ জনকে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শামছুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আটটি বুথে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও তাঁরা একটি দিয়েই কাজ চালাতে পারছেন।

শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই মাজার রোডের নগর মাতৃসদন অবস্থিত। এই নগর মাতৃসদনে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ২০ ফেব্রুয়ারি মাজার রোডের নগর মাতৃসদনে টিকা নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধনের সময় লালকুঠির শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দেখায়নি। তাই মাজার রোডের মাতৃসদনকে নির্বাচন করি।


আজিমপুর মাতৃসদন কেন্দ্রটিতে শুরু থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ৫৮২ জন। গতকাল নেন ১৭০ জন। সেখানে তিনটি বুথ স্থাপনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু চাপ না থাকায় একটি বা দুটি বুথ চালু রেখে টিকা দেওয়া হচ্ছে। যদিও আজিমপুর ও এর আশপাশের এলাকার অন্য কেন্দ্রগুলোতে চাপ অনেক বেশি। যেমন হাজারীবাগ পার্ক এলাকার মাতৃসদনে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে তারিখ পাওয়ার অপেক্ষায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।

হাজারীবাগ মাতৃসদন হাসপাতালে টিকা নিতে আসা ও টিকা গ্রহনের পরবর্তী অপেক্ষায় সাধারন মানুষ। হাজারীবাগ, ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি
ছবি : দীপু মালাকার

আজিমপুর মাতৃসদনের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসাম্মৎ কোহিনূর খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের পরিচিতজনদের বলেছি উত্তর সিটির কেন্দ্র তালিকা থেকে এই কেন্দ্রকে নির্বাচন করতে।’

দেশে গতকাল পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে টিকা নিয়েছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯০ জন, আর গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭০ জন।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে এক সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দেওয়া শুরু হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে কোভিড-১৯ টিকা প্রথম ডোজ গ্রহণের ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে।