এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ না: অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আজ শুক্রবার সকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
ছবি: দীপু মালাকার

ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই—এমন দাবি নিয়ে আন্দোলনরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আজ শুক্রবার সকালে শুরু হয়েছে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। যার ভিত্তি কোনো ধর্ম হবে না। কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রেখে বঙ্গবন্ধুর মানবিক বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।’

ঐক্য পরিষদের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জড়ো হন সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। ঢাকা মহানগরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলন প্রাঙ্গণ ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়। বেলা ১১টার পর প্রদীপ প্রজ্বালন, কবুতর ও বেলুন ওড়ানোর মতো আনুষ্ঠানিকতাগুলো সারা হয়। এরপর জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও ঐক্য পরিষদের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এই জানুয়ারি মাসেরই ১০ তারিখে (১৯৭২ সাল) পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে ১৭ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। যার ভিত্তি কোনো ধর্ম হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। পরে ১৯৭২ সালের অক্টোবরে সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় এতে জাতীয়তাবাদ যুক্ত হয়েছিল।

সৈয়দ আনোয়ার বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের অবৈধ সামরিক সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে উড়িয়ে দিল। এরপর আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ এসে এর সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যোগ করলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত করল বটে। কিন্তু তেলে-জলে মেলাতে পারলাম না। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, আবার রাষ্ট্রধর্মও আছে।

সৈয়দ আনোয়ার বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম। আবার বলা হয়েছে, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। এর অর্থ হলো একধরনের করুণা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের উল্লেখ করে সৈয়দ আনোয়ার বলেন, সেখানে সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচারকে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে। কিন্তু এই তিন লক্ষ্যের একটিও অর্জন হয়নি।

ঐক্য পরিষদের দীর্ঘদিনের দাবি ১৯৭২-এর মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দাবিকে সমর্থন করেন অধ্যাপক আনোয়ার। তবে পরিষদের আরেকটি দাবি, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের বিরোধিতা করেন তিনি। সৈয়দ আনোয়ার বলেন, ‘আপনারাই বলেছেন ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম তো আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে নামে কোনো মন্ত্রণালয় কেন হবে? দরকার হলো, এ রাষ্ট্রের মানবিক হওয়ার।’

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারপারসন ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টচার্য, কো-চেয়ারপারসন কাজল দেবনাথ, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, ঊষাতন তালুকদার ও নির্মল রোজারিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন।

সম্মেলন উদ্বোধনের আগে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হয়। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে তেজগাঁও চার্চ কয়্যার। নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন নৃত্যগোষ্ঠী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ হয়ে সম্মেলন স্থলে ফিরে আসে।

আজ বিকেলে সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেবেন। এতে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।