এক টাকা বাড়তি ব্যয়ে পাঁচ গুণের বেশি লাভ

  • দেশে ২০১৯ সালে ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে।

  • তিনটি ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয় যথেষ্ট।

খুলনার দাকোপে বিপর্যস্ত বাঁধের পাশের একটি শৌচাগার
ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ গত বছরের ২০ মে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল খুলনা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) খুলনা জেলা কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আম্পানে ৫ হাজার ২০০ টিউবওয়েল ও ৫৫ হাজার শৌচাগার বা টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের অন্যসব এলাকার পানি ও স্যানিটেশনের দেখভালের দায়িত্ব ডিপিএইচইর। প্রতিষ্ঠানটির খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আকমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা। এসব এলাকার পানি ও শৌচাগারের স্থাপনাগুলোর পরিকাঠামো দুর্বল। তাই এগুলো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই নষ্ট হয়। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চল আরও বেশি দুর্যোগের মুখে পড়ছে।

নানা কর্মসূচিতে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব টয়লেট দিবস। দিবসের প্রতিপাদ্য ‘টয়লেটের মূল্যমান: আমরা কোথায়?’

পানি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়াটারএইড ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভিভিড ইকোনমিকসের গবেষণায় দেখা গেছে, পানি ও স্যানিটেশনের পরিকাঠামো নির্মাণের সময় ৭৭৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকার সমমূল্যের ক্ষতিরোধ সম্ভব। ২০২০ সালের বন্যার ক্ষতির পরিমাণ ধরে এক গবেষণায় তারা এ হিসাব দিয়েছে। এতে এক টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে লাভ হতো পাঁচ টাকারও বেশি। তারা ‘মিশন ক্রিটিক্যাল: ইনভেস্ট ইন ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ফর এ হেলদি অ্যান্ড গ্রিন ইকোনমিক রিকভারি’ নামে গবেষণাটি গত জুলাই মাসে প্রকাশ করে।

এদিকে নানা কর্মসূচিতে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব টয়লেট দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘টয়লেটের মূল্যমান: আমরা কোথায়?’

দেশে ২০১৯ সালে ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। আম্পানে ৩১ জন মারা যান। তিনটি ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয় যথেষ্ট। ২০২০ সালের বন্যায় ৩৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। একেকটি দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে।

ওয়াটারএইডের গবেষণায় ২০২০ সালের বন্যায় পানি ও স্যানিটেশন খাতের অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়। এই দুই খাতের ক্ষতির ফলে মানুষের নানা ধরনের রোগ, সময় নষ্ট হওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হিসাব গণনা করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০২০ সালের বন্যায় অন্তত পানি ও স্যানিটেশনের স্থাপনা নষ্ট হয় এক হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার। এসব স্থাপনা পুনর্নির্মাণ এবং এসব থেকে সেবা না পাওয়ায় ক্ষতি হয় ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। সব মিলিয়ে অনুমিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ হয়েছে ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ।

ওয়াটারএইডের পরিচালক (কর্মসূচি) হোসেন ইশরাত আদিব বলেন, অনুমিত অর্থনৈতিক মূল্য হিসাব করলে দেখা যায়, মাথাপিছু ১ টাকা অতিরিক্ত খরচে লাভ হয় ৫ টাকা ২৮ পয়সা।

ওয়াটারএইডের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে ৮২ হাজার টয়লেট এবং ৭৩ হাজার টিউবওয়েল নষ্ট হয়।

এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে টিউবওয়েল বা টয়লেট জলবায়ুসহিষ্ণু করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ওয়াটারএইডের বাংলাদেশের প্রধান হাসীন জাহান।

তবে এখন স্থাপনা নির্মাণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কথা ভাবনায় থাকে বলেই দাবি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের।