এক শাড়ি দেখিয়ে অন্যটি বিক্রি, জরিমানা

মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসিপল্লির বেনারসি কুঠি থেকে একটি শাড়ি কিনেছিলেন তৃপ্তি চৌধুরী। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখেন, তিনি যে শাড়িটি পছন্দ করেছিলেন, এটি সেই শাড়ি নয়। প্যাকেটে অন্য একটি শাড়ি দিয়েছেন বিক্রয়কর্মী। এমন প্রতারণার বিষয়টি গত শনিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানান এই নারী। পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বেনারসিপল্লির এই দোকানে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এই দোকানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, গত শুক্রবার দরদাম করে ৭ হাজার টাকা দিয়ে তিনি শাড়িটি কেনেন। পরে ফলস লাগানো ও পলিশ করতে নিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয়কর্মী। এ জন্য তাঁরা আরও ৫০০ টাকা নেন। আধা ঘণ্টা পর শাড়িটি প্যাকেট করে নিয়ে আসেন এই বিক্রয়কর্মী। এ সময় তিনি প্যাকেট খুলে শাড়িটি দেখতে চাইলে, তা দুই ঘণ্টার আগে খোলা যাবে না বলে জানান বিক্রয়কর্মী। তাঁর কথামতো বাসায় ফিরে দেখেন, প্যাকেটে পছন্দের শাড়িটি নেই। এর বদলে অন্য আরেকটি শাড়ি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শাড়িতে ফলস লাগানো এবং পলিশও করা হয়নি।

গতকাল এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শাড়ি পরিবর্তনের বিষয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা স্বীকার করেন। পরে তাঁদের জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ভুক্তভোগী এই নারী শাড়িটি ফেরত দিয়ে তাঁর টাকা বুঝে নেন।

বেলা দুইটার দিকে পল্লবীর ৬ নম্বর বাজার একতা বহুমুখী সমবায় সমিতি মার্কেটে (মসজিদ মার্কেট) অভিযান চালান মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। অভিযানের শুরুতে তিনি এই বাজারের মাছ, মুরগি, গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে জড়ো করেন। এ সময় তিনি প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশ দেন। ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ দোকান ও মালামাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেন। ব্যবসায়ীরা তাঁর কথা মেনে চলবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। শাহরিয়ার বলেন, আগামী রোববার বা সোমবার তিনি এই বাজার পরিদর্শনে আসবেন। এই দিন যদি কোনো দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানো না থাকে এবং দোকানপাট ও মালামাল অপরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দোকানকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হবে।

ভোক্তা অধিকারের অভিযান দলটি যখন এই মার্কেটে আসে, তখন মালামাল দোকানে রেখেই দৌড়ে পালান পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। পরে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ডেকে আনা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা ১১০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনেন। খুচরা বাজারে তা ১২০ টাকা করে বিক্রি করেন। দোকানে দাম টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বেলা আড়াইটার দিকে এই বাজারসংলগ্ন সৌদিয়া হোটেল ও খোকন হোটেলে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই দুটি হোটেলের রান্নাঘর নোংরা থাকায় যথাক্রমে তিন হাজার ও দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মূল্যতালিকা টাঙানো না থাকায় কাশেম স্টোরকে দুই হাজার ও নানার দোয়াকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

উপপরিচালক শাহরিয়ারের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান ও ইন্দ্রাণী রায়।

এদিকে গতকাল দুপুরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ভ্রাম্যমাণ দল। তারা মুদিদোকানে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে না রাখায় এবং পণ্যের দাম বাড়াতে কারসাজি করার অপরাধে সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বৈশাখী বাণিজ্যালয়, নীড় এন্টারপ্রাইজ, জনতা ট্রেডার্স, আরিফ স্টোর-২ ও আরিফ মদিনা ট্রেডিংয়ের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা, ইউরো ওয়ার্ল্ড ও বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং নিউ প্রিয়জন রেস্তোরাঁ, মনির চাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডার ও মিমি ভ্যারাইটিজ স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল এই দলের নেতৃত্ব দেন।