একটু দেরিতেই তাঁদের অপূরণীয় ক্ষতি

বাবার সঙ্গে ছোট্ট খাদিজা
ছবি: সংগৃহীত

১০ বছরের খাদিজা পড়ত রাজধানীর জুরাইনের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান মেয়েটির জ্বর আসে গত ৭ সেপ্টেম্বর। প্রথমেই জ্বর ১০১ ডিগ্রি হলেও মা-বাবা ধারণা করেছিলেন হয়তো সাধারণ জ্বর। স্থানীয় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী শুরু হয় চিকিৎসা। তবে জ্বরের চার দিনের মাথায় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে খাদিজা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে খাদিজাকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তির পর ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শুরু হয় চিকিৎসা। তবে খাদিজার রক্তে প্লাটিলেট কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় অন্যান্য শারীরিক জটিলতা। ভর্তি হওয়ার পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় খাদিজা। একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় আসাদ-রুবি খাতুন দম্পতি।

খাদিজার বাবা আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলিজার টুকরা মেয়ের জীবনটা কেড়ে নিল ডেঙ্গু। জ্বর ধরা পড়ার পর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। মেয়ের ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিটফোর্ড হাসপাতালে আনলাম। কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না…।’

খাদিজার মা রুবি বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে মেয়েকে চিরদিনের মতো হারাতে হবে, কল্পনাতেও ছিল না। এই ডেঙ্গু আমাদের সোনার সংসারটা তছনছ করে দিল।’
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত করোনা মহামারির মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। চলতি বছর জুরাইনের ছোট্ট খাদিজার মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৩ জন। ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগই প্রথম দু-তিন দিন বাসায় অবস্থান করেন। ডেঙ্গুর পরীক্ষাও করাননি। তবে জ্বরের মাত্রা যখন ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি হয়, রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়, তখন ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানো হয়। কেউ কেউ ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পরও বাসায় অবস্থান করেন। বেশির ভাগ রোগী শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে যান। তবে চিকিৎসায়ও তাঁরা ভালো হননি। হাসপাতালেই মারা গেছেন।

একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, এ সময় জ্বর দেখা দিলে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু ও করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগীর দেহে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, সেটি জানা সম্ভব। তখন চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক ব্যবস্থাপত্র দেওয়া সম্ভব হয়।

মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ-উন-নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকেই আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিয়ে আসছি। বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী কিন্তু চিকিৎসায় ভালো হয়ে বাসায় ফিরছেন। অবশ্য আমাদের হাসপাতালে ইতিমধ্যে ২২ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। তাঁদের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, অনেক দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল, অনেকের অবস্থাই তখন সংকটাপন্ন। তাই জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে র‍্যাশ, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। তাতে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসে।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত রোগীর সিংহভাগ (৮৩ শতাংশ) ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ চিকিৎসা নিয়েছেন এই নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে। এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই বছর ডেঙ্গুতে ১৪৮ জন মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন নুরুজ্জামান

শরীয়তপুরের নুরুজ্জামান ১৫ বছর আগে রাজধানীতে এসে তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন যাত্রাবাড়ীর মীর হাজারীবাগে। একটি কারখানায় কাজ করে সংসার চালাতেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর নুরুজ্জামানের জ্বর আসে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। পরে তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রিতে ঠেকলে স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষার পর ডেঙ্গু পজিটিভ হন। স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তিও হন। তবে প্লাটিলেট কমে যাওয়াসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার পর তাঁকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নেওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। পরদিন সেখানেই মারা যান নুরুজ্জামান।

নুরুজ্জামানই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেই মানুষের এমন আকস্মিক চলে যাওয়ায় এখন পুরোপুরি দিশেহারা পরিবারটি।

নুরুজ্জামানের চাচাতো ভাই মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বর হওয়ার পর প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। ওষুধ খাওয়ার পরও জ্বর না কমলে ডেঙ্গুর পরীক্ষা হয়। ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর অনেক ছোটাছুটি করেও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। এখন হয়তো পরিবারটিকে ঢাকা ছাড়তে হবে। খাবারের ব্যবস্থাই হয় না, ঘরভাড়া দেবে কোথা থেকে?’

শাহজাদির জ্বর ছিল ১০৫ ডিগ্রি

স্বামী, এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে গৃহবধূ শাহজাদি বেগম রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় থাকতেন। গত ২৭ জুলাই জ্বরের উপসর্গ শুরু হলে প্রথম দিন কোনো ওষুধ খাননি। তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ ডিগ্রিতে। তখন শাহজাদি স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। জ্বর না কমায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। ডেঙ্গু ধরা পড়ার পরও তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে থাকলে শাহজাদিকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় গত ৩১ আগস্ট। পরদিন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহজাদি।

শাহজাদির আত্মীয় মো. স্বপন বলেন, ‘মামির যে ডেঙ্গু হয়েছিল, আমরা বুঝতেই পারিনি। জ্বর বেড়ে গেলে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’

সিনথিয়ার আর আইনজীবী হওয়া হলো না

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন ২১ বছরের সিনথিয়া। মুন্সিগঞ্জের মেয়ে সিনথিয়া মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায়। গত ৮ আগস্ট জ্বর শুরু হলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু। প্রথমে দুদিন বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। পরে রক্তে প্লাটিলেট আর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করলে ১০ আগস্ট সিনথিয়াকে ভর্তি করা হয় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে। ভর্তির এক দিনের মাথায় মারা যান সিনথিয়া। সিনথিয়ার ভাই আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোনের স্বপ্ন ছিল বড় উকিল হবে। কিন্তু ডেঙ্গু ওর সেই স্বপ্ন কেড়ে নিল। আমাদের তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন ছিল সিনথিয়া।’

আওলাদ হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, দনিয়া, কাজলা, শনির আখড়া, জুরাইনসহ আশপাশের এলাকায় অনেকের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
মিটফোর্ড হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকসহ অন্যরা জানান, এ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, বেশির ভাগ রোগী যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন।

শাহিনা রেখে গেছেন ছোট্ট তিন সন্তান

৩৫ বছর বয়সী গৃহবধূ শাহিনা খাতুন তিন ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় বসবাস করতেন। গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ধোলাইপাড় এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসেন শাহিনা। ওই বাসায় অবস্থান করার সময় জ্বর শুরু হয়। প্রথম দুদিন ডেঙ্গুর পরীক্ষা করানো হয়নি। তবে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ সেবন করেন শাহিনা খাতুন। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গত ৩১ জুলাই তাঁকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। মিটফোর্ড হাসপাতালে শাহিনা মারা যান। শাহিনার তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের আইয়ুবের বয়স ১২ বছর, মেজ ছেলে স্বপ্নিলের বয়স ১০ বছর আর ছোট ছেলেটির বয়স মাত্র ছয়।

ছোট্ট তিন ছেলে রেখে মারা গেছেন শাহিনা।
ছবি: সংগৃহীত

শাহিনার আত্মীয় আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বর হওয়ার পর ভাবির খাওয়ার রুচি অনেক কমে যায়, দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। দুদিন বাসায় রেখে ভাবিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতির পর হাসপাতালে নিয়ে এলেও লাভ হয়নি। ভাবি মারা যাওয়ার পর কম বয়সী তিনটি ছেলে মা মা বলে প্রায় সময় কেঁদে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে ভাইয়ের মানসিক অবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত।

ডেঙ্গুতে মারা যান এএসআই সাজ্জাদ

মুন্সিগঞ্জের ছেলে সাজ্জাদ হোসাইন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে কর্মরত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। বড় ছেলেটি দশম শ্রেণির ছাত্র আর ছোটটি পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। গত ১৫ আগস্ট রূপগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় জ্বর দেখা দেয় সাজ্জাদ হোসাইনের। স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জ্বর হওয়ার তথ্য জানান, তবে প্রথমেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাননি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর গত ১৮ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিনই মারা যান এএসআই সাজ্জাদ হোসাইন।

সাজ্জাদের স্ত্রী শাহজাদি খাতুন বলেন, ‘প্রথমে তো আমরা বুঝতে পারিনি, ওনার (স্বামী) ডেঙ্গু হয়েছে। জ্বরের পর তিনি ঠিকমতো খাইতেও পারতেন না। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ল, কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে পারলাম না।’

মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে রেখার

দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা রেখা খাতুন পোশাকশ্রমিক। ২৫ বছরের রেখা মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর বাড্ডায়। গত ১০ জুলাই জ্বর শুরু হলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন। জ্বরও কিছুটা কমে। একটু সুস্থবোধ করতেই ছুটে যান কর্মস্থলে। তিন দিন কাজও করেন। আবার প্রচণ্ড জ্বর শুরু হয়। এবার তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি। মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। ততক্ষণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন রেখা। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে রেখাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আনা হয় ১৪ জুলাই। তিন দিন পর রেখা মারা যান। রেখার মা মরিয়ম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। আগে যদি বুঝতাম মেয়ের ডেঙ্গু হয়েছে, তাহলে তো আরও আগে হাসপাতালে নিতাম।’

পোশাককর্মী রেখা।
ছবি: সংগৃহীত

মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গুতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হাসপাতালে এসেছেন অনেক দেরিতে। এমন অনেক ডেঙ্গু রোগী আছেন, যাঁদের প্লাটিলেট কমাসহ নানা কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। এসব রোগীর নিবিড়ভাবে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, রোগীর কোন কোন অঙ্গ আক্রান্ত করে ফেলেছে। এসব প্রতিবেদন দেখা সাপেক্ষে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় এবং রোগী দ্রুত ভালো হয়ে ওঠেন।