একদিনের ব্যবধানে জাল স্ট্যাম্প বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার আরও চার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

জাল জুডিশিয়াল, নন জুডিশিয়াল ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির দায়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব–৩। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেওয়া হয়।  

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. ফরমান আলী সরকার (৬০) এবং তাঁর দুই সহযোগী মো. তুহিন খান (৩২) ও মো. আশরাফুল ইসলাম (২৪)। গতকাল শুক্রবার র‌্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযানে মতিঝিল থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা মূল্যমানের জাল স্ট্যাম্প, পাঁচ হাজার কার্টিজ পেপার, একটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার ও নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা জব্দ করা হয়। গত কয়েক বছরে তাঁরা কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলা ও আবেদনের ক্ষেত্রে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহারের বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই অভিযান চালানোর অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে। ওই অভিযানেও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিচারিক কার্যক্রমে জুডিশিয়াল ও চুক্তি করতে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার হয়ে থাকে। স্ট্যাম্প সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। সরকারিভাবে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুরে স্ট্যাম্প ছাপা হয়। ‘স্ট্যাম্প ভেন্ডর’দের (স্ট্যাম্প বিক্রেতা) প্রথমে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিতে হয়। এরপর আরও কয়েক ধাপ অতিক্রম করে একজন ব্যক্তি বিক্রির জন্য স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে থাকেন।

র‌্যাব– ৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের স্ট্যাম্প বিক্রির কোনো অনুমোদন ছিল না। স্ট্যাম্প বিক্রেতারা সরকারের কাছ থেকে একসঙ্গে তিন লাখ টাকার স্ট্যাম্প কিনতে পারেন। প্রতিটি ১০০ টাকার স্ট্যাম্প বিক্রেতারা সাড়ে ৯৮ টাকায় কিনতে পারেন এবং তাঁদের নির্দিষ্ট অঙ্কের ভ্যাট দিতে হয়। ট্রেজারি চালানসহ প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্রই গ্রেপ্তারকৃতরা দেখাতে পারেননি। আসামিরা ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ৬০–৭০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আসল ও নকল স্ট্যাম্পের পার্থক্য দেখানো হয়। যন্ত্রের ভেতরে আসল স্ট্যাম্প ঢোকালে ‘জিওবি’ (গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত রূপ) দেখা যায়, কিন্তু নকল স্ট্যাম্পে সেটি দেখা যায়নি।

র‌্যাব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন বলে স্বীকার করেন। তাঁদের কাছ থেকে যে স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে তার কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এই স্ট্যাম্পগুলোয় আসল স্ট্যাম্পের মতো ছিদ্র নেই এবং পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

চারজনের এই চক্রটির প্রধান ফরমান আলী সরকার। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে পাস করেছেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ‘স্ট্যাম্প ভেন্ডর’ হিসেবে কাজ করছেন। ফরমান আলী সরকার এর আগেও সিআইডির হাতে একই অপরাধে গ্রেপ্তার হন ও জেল খাটেন। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও তিনি একই কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন মো. আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুল কুড়িগ্রামের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর একটি ফোন কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। দুই বছর হয় ফরমান আলীকে সহযোগিতা করছেন তিনি।

ফরমান আলীর অপর দুই সহযোগী মো. তুহিন খান ও মো. রাসেলের অবৈধ জাল স্ট্যাম্প বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমান দোকান আছে। তাঁদের ব্যবসা মূলত মতিঝিল কেন্দ্রিক। তুহিন খান শনির আখড়া মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি তিন–চার বছর ধরে এই জাল–জালিয়াতি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। রাসেলের নামে রাজধানীর পল্টন থানায় অস্ত্র ও অপহরণ মামলা আছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।