এখন আমরা কেউ নিরাপদ নই: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশ এবং ধর্ষণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদযাত্রার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১০ অক্টোবর, ঢাকা
ছবি: সাজিদ হোসেন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সম্প্রতি দেশজুড়ে যে ব্যাপক হারে ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, বিনা বিচারে হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে, তার প্রতিবাদে সারা দেশ ফুঁসে উঠেছে। এখন আমরা কেউ নিরাপদ নই। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। যৌন নির্যাতন যেমন অপরাধ, তেমনি মানুষের অধিকার হরণ করাও একই রকম অপরাধ।’

আজ বেলা ১১টায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশ এবং ধর্ষণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদযাত্রার অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ হয়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে। তাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।

সমাবেশ থেকে ধর্ষণকারীদের ৫০ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দাবি করা হয়। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের ডাক দেন ডা. জাফরুল্লাহ।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে যে ধর্ষণের বন্যা বয়ে চলেছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা জড়িত। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় এসব নারকীয় ঘটনা ঘটছে। এদের বিচার হয় না। একদিকে ক্ষমতার যোগ, অন্যদিকে বিচারহীনতা। সরকার বড় বড় কথা বলে কিন্তু নারীর পক্ষে আইন প্রয়োগের কোনো উদ্যোগ নেয় না। তনু হত্যা, ত্বকী হত্যা, সাগর-রুনি, আবরার হত্যার বিচার হয়নি। এ কারণেই আজ দেশে ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, খুনি, লুটেরাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। বিচারের কথা বলে মাঝেমধ্যে দু-একটি চুনোপুঁটিকে ধরে, কিন্তু মূলোৎপাটনের কোনো উদ্যোগ নেয় না।

বুয়েটের ছাত্র আবরারের হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আবরার ছিল আগ্রাসী ভারতের কাছে এই সরকারের নতজানু নীতির প্রথম প্রতিবাদকারী। এ কারণে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার স্মৃতিতে নির্মিত স্তম্ভ ভেঙে দিয়েছে। আজ ২০২০ সালে যারা আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেয়, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়ে নয়, তিনি এই সমাবেশে এসেছেন বিবেকের তাড়নায়।

দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘খবরের কাগজ খুললেই এখন শুধু ধর্ষণ, খুন, দুর্নীতির খবর। খবরের কাগজ পড়া যায় না। এই ঘটনাগুলো আমাদের সব অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। আমরা লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করছে রাষ্ট্র ভেতর থেকে ক্রমেই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে, তা এই রাষ্ট্রকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। একে ঢেলে সাজাতে হবে। এই অবস্থা চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন ডিএসসিসির সাবেক কমিশনার ফরিদ উদ্দিন, নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি কাজী শওকত আলী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির নেতা আকতার খান, পরিষদের মহানগর কমিটির নেতা মনিরুজ্জমানসহ অনেকে। সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, প্রতিবাদী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। জ্বালাময়ী বক্তৃতায়, স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। এসব আয়োজনে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। একই সঙ্গে দেশে মধ্যবর্তী সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠারও দাবি করা হয়।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশ এবং ধর্ষণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পদযাত্রা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১০ অক্টোবর, ঢাকা
ছবি: সাজিদ হোসেন

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

সম্প্রতি সারা দেশে ব্যাপকভাবে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে কাল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামের একটি সংগঠন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল বাহার মজুমদার, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, এনামুল হকসহ অনেকে । এই সমাবেশ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়।

বক্তারা বলেন, ধর্ষকদের রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে দ্রুত বিচার আইনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। কিছু ধর্ষক ও সন্ত্রাসীর কারণে সরকারের অনেক সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া চলবে না।

জাতীয় যুব সংহতি

আজ সকাল থেকেই একের পর একটি সংগঠন ব্যানার নিয়ে মিছিল করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আসতে থাকে। জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন কেন্দ্রীয় জাতীয় যুবসংহতি বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন আলমগীর শিকদার। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের অংশ হিসেবে রাজধানীতে এই সমাবেশে আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে ধর্ষণ মামলার বিদ্যমান আইনের সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এর বিচার করে শাস্তি কার্যকর কারার দাবি তোলা হয়। বক্তারা বলেন, পল্লিবন্ধু এইচ এম এরশাদ অ্যাসিড-সন্ত্রাস বন্ধ করতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে দ্রুত বিচার করার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে দেশ থেকে ভয়াবহ অ্যাসিড-সন্ত্রাস বন্ধ হয়েছে। ধর্ষণ বন্ধেও এমন আইন করা সময়ের দাবি। ফখরুল আহসানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বক্তব্য দেন শাজাহান কবীর, শহীদুল ইসলাম, মোরশেদ হাসান প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।

মইনীয়া যুব ফোরাম

মইনীয়া যুব ফোরাম দেশব্যাপী ধর্ষণ, বলৎকার, নির্যাতনের প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ-সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এই জঘন্য অপরাধে দেশবাসী আজ বিচলিত। ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক অনুশাসন মানা হচ্ছে না। অপরাধীরা সামাজিকভাবে শক্তিধর এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ায় এসব ঘৃণ্য অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সমাবেশ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে তা দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কার্যকর করার দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি

দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এম ওয়াহিদুজ্জামানসহ অনেকে বক্তব্য দেন। এই সমাবেশ থেকেও দলীয় প্রশ্রয় না দিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।