এত্ত বড় ডাকবাক্স!

অতিকায় এই ডাকবাক্স আসলে ডাক ভবন। ডাকবাক্সের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ভবনটি। ঝকঝকে–চকচকে ভবনটি ১৪ তলা উঁচু।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাকবাক্সের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে ডাক ভবন
তানভীর আহাম্মেদ

ডাকবাক্স এখন প্রায় বেকার। চিঠি লেখাই ভুলে গেছে লোকজন। কার্ডে লিখে বা খামে ভরে পাড়া-মহল্লার মোড়ের লাল রঙের বাক্সে ফেলতে যাওয়া অষ্টপ্রহর ব্যতিব্যস্ত জীবনে বড্ড ঝামেলার কাজ। তার ওপর আবার সেই চিঠি পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা। এসব কি আর এখনকার দিনে পোষায়! যেখানে অতি দরকারে সেলফোনের বোতাম চেপে দেড়-দুই লাইনের খুদে বার্তাই যথেষ্ট। এমন দিনে এত্ত বড় ডাকবাক্স! এ তো রীতিমতো গিনেস বুকে রেকর্ড করার মতো বিষয়।

অতিকায় এই ‘ডাকবাক্সটি’ চোখে পড়ল শেরেবাংলা নগরে হালে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা অফিস অঞ্চলে। অতিকায় এই ডাকবাক্স আসলে ডাক ভবন। ডাকবাক্সের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ভবনটি। ১৪ তলা উঁচু এই ঝকঝকে-চকচকে ডাক ভবন চোখে পড়েছে হয়তো অনেকেরই। পড়ারই কথা। এর উজ্জ্বল কাচের দেয়াল আর তলায় তলায় লাল রঙের ধাতব বলয় অনেক দূর থেকেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

সরকারের ডাক বিভাগের এই নতুন ভবনের এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রায় পৌনে এক একর জায়গার ওপরে এই ভবন তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষে। কুশলী আর্কিটেক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্থপতি কৌশিক বিশ্বাস এর স্থাপত্য নকশা করেছেন। প্রথমে ভবনটি ৮ তলা পর্যন্ত করার কথা ছিল, পরে এটি ১৪ তলা করা হয়। প্রতিটি তলায় জায়গা আছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুট। ভবন তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯২ কোটি টাকা।

ভবনের ভেতরে পা রাখতেই সামনে পড়বে রানার। সুকান্ত ভট্টাচার্য সেই যে লিখেছিলেন, ‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/ রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে...’। ডাক বিভাগের প্রতীক হয়ে ওঠা রানারের প্রমাণ আকারের ভাস্কর্য বসানো হয়েছে মেঝের মাঝখানে। আর তিন দিকের দেয়াল সাজানো স্মারক ডাকটিকিটের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট দিয়ে। এতে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, শহীদ বুদ্ধিজীবী, বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়। তাতে উঠে এসেছে বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি।

ডাক ভবনে থাকবে নিজস্ব বিশেষ আগুন নেভানোর ব্যবস্থা। এ ছাড়া ভবনে আছে ভূগর্ভস্থ দুটি তলা। এতে থাকবে পার্কিং, নিজস্ব সার্ভার। চতুর্থ তলায় থাকবে মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের দপ্তর। একেবারে ওপরে থাকবে খোলামেলা মিলনায়তন। আলাদা করে বেশ কয়েকটি সভাকক্ষ। ওপরের তিনটি তলায় থাকবে ডাক বিভাগের মুঠোফোনে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর কার্যালয়।

ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পর্কে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক জানান, ডাক ভবনের সব কাজ শেষ। শিগগিরই এর উদ্বোধন হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাঁদের কার্যালয় নতুন ভবনে চলে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডাক বিভাগের সেবার মান উন্নত হয়েছে, নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে, তেমনি অনেক কিছু হারিয়েও গেছে। সেই নিদর্শন সাজিয়ে রাখা হবে ডাক জাদুঘরে। এই জাদুঘর তৈরি করা হচ্ছে ভবনের তৃতীয় তলায়। এ ছাড়া এখানে থাকবে একটি পাঠাগার। দোতলায় থাকবে ক্যাফেটেরিয়া। নিচের তলায় একটি ডে-কেয়ার সেন্টারও থাকবে। ভবনের চারদিক কাচে ঘেরা থাকায় দিনে সূর্যের আলোতেই আলোকিত থাকবে, বাতি জ্বালানোর বিশেষ প্রয়োজন হবে না। নতুন ভবনে এসে জনগণের সেবার মাধ্যমেও আলোকিত হবে ডাক বিভাগ—এই কামনা করাই যায়।