ওয়াসায় পানির গাড়িরও সংকট

ওয়াসার পানির গাড়ি।  ফাইল ছবি
ওয়াসার পানির গাড়ি। ফাইল ছবি

একদিকে রমজান মাস, তার ওপর দিনভর দুঃসহ দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে ঢাকার প্রতিটি অঞ্চলে পানির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বাড়তি পানির জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহের কথা। কিন্তু বাড়তি পানি তো পাওয়া যাচ্ছেই না, উপরন্তু অনেক এলাকায় ন্যূনতম বিশুদ্ধ পানিও মিলছে না। হয় পানির সংকট, নয়তো পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ।

এখন পানির বেশি সংকট চলছে মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া পর্বতা, রাজাবাজার, মুগদা, জুরাইন, দনিয়া, মুরাদপুর, মাতুয়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায়।

কলে পানির প্রবল সংকটে ফলে ওয়সার পানির গাড়ির চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহকেরা পানির গাড়িও সহজে পাচ্ছেন না। ওয়াসার ১১টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে পানির গাড়ির চাহিদা জানানো হলে পানির গাড়ি বাসায় আসার কথা। প্রতিটি ছয় হাজার লিটারের বড় গাড়ির পানির দাম ৬০০ টাকা।

অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, তাঁরা পানির গাড়ির জন্য আগাম চাহিদা দিলেও নির্ধারিত সময়ে পাচ্ছেন না। অনেক সময় তিন দিন পরে পানির গাড়ি আসছে। গত ২৮ মার্চ ওয়াসার সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, কোথাও পানির সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পানির গাড়ি, ট্রলি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে। কিন্তু সরবরাহ দূরে থাক, সংকট এলাকায় পানির গাড়ি চেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তা মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। ওয়াসার একটি অঞ্চলে প্রতিদিন ১০০ গাড়ি পানির চাহিদা থাকে, তবে ২০ গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক জানান, প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির ‘সুপারিশ’ থাকলে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি গাড়ি পাওয়া যায়। তা ছাড়া পানির নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত ধরিয়ে দিলেও গাড়ি পাওয়া যায়—এমন অভিযোগও আছে।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের ৪৩টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে অতি পুরোনো হওয়ায় ১০টি গাড়ির ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল থাকে। অন্তত ১০০টি গাড়ি দরকার বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান। সূত্রমতে, সংকটপ্রবণ প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ১০০ গাড়ি পানির চাহিদা রয়েছে। ফলে চাহিদার এক–পঞ্চমাংশ চাহিদাও মেটানো যাচ্ছে না। জুরাইন এলাকার একজন বাসিন্দা (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা) নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, গত বুধবার সকালে গাড়ি চেয়ে তিনি পেয়েছেন পরদিন দুপুরে। এর মধ্যে তিনি তিন দফায় ওয়াসাকে তাগিদ দেন। দেরি দেখে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে পোস্তগোলায় আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গোসল করে আসেন।

মুগদার একজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা থাকায় তিনি অনেক সাধনা করে গাড়ির পানি কিনেছেন। কিন্তু সে পানিতেও ছিল ময়লা। এ বিষয়ে অবশ্য ওয়াসা বলেছে, যে বাড়িতে পানি দেওয়া হয়েছে, তার সংরক্ষিত ট্যাংকে (রিজার্ভ ট্যাংক) নিশ্চয়ই আগে থেকেই ময়লা ছিল। ওয়াসার গাড়ির পানি ময়লা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ইন্দিরা রোড রাজাবাজারের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, গাড়ি চাওয়ার নিয়ম জানতে চেয়েও তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, বলা হয়ে থাকে, ওয়াসার ‘হেল্প লাইনে’ ফোন করলে সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার সকালে হেল্প লাইন নম্বরে (১৬১৬২) ফোন করার পর একটি নারীকণ্ঠ ভেসে আসে। বলা হয় বর্তমানে সব লাইন ব্যস্ত আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর লাইন খালি হয়। এরপর যার সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। গাড়ি পাওয়ার নিয়ম জানার পরিবর্তে উপরন্তু তাঁর মুঠোফোন থেকে কিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে।

ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম শহিদউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির পাম্প বিকল হওয়ার কারণে পানির কিছুটা সংকট হচ্ছে। তবে অন্য এলাকার পানি দিয়ে তা পূরণের চেষ্টা চলছে। পানির গাড়িও যতটা সম্ভব দেওয়া হচ্ছে। জুরাইন ও আশপাশের এলাকায় ওভারপাস নির্মাণের কারণে পানির পাইপ ফেটে যায়। যার জন্য সরবরাহ করা পানিতে ময়লা ঢুকছে। অনেক বাড়িতে সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওয়াসা নিজ খরচে ৫০টি বাড়িতে নতুন সংযোগ দিয়েছে।