কদমতলীতে মা-বাবা-বোন হত্যা: মেয়ে ও তাঁর স্বামীকে আসামি করে মামলা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর কদমতলীতে মা, বাবা ও বোনকে হত্যার অভিযোগে পরিবারটির আরেক মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম ও তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলামকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জামালউদ্দিন আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার রাতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি করেছেন নিহত মাসুদ রানার ভাই সাখাওয়াত হোসেন।

মামলায় বাদীর অভিযোগ, শফিকুলের প্ররোচনায় মেহজাবিন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ওসি জামালউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে আটক নিহত মাসুদ রানার মেয়ে মেহজাবিনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার অপর আসামি মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শফিকুল অসুস্থ থাকায় তাঁকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।

৯৯৯-এ এক নারীর ফোন পেয়ে কদমতলীর মুরাদপুরের লাল মিয়া সরকার রোডের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় যায় পুলিশ। গতকাল সকালে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। বিকেলে লাশ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন মাসুদ রানা (৫০), তাঁর স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম (৪৫) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম (২১)।

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহত মাসুদ রানার মেয়ে মেহজাবিনকে (২৪) গতকালই আটক করে পুলিশ। আর মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল (৩০) ও তাঁদের পাঁচ বছরের মেয়েকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মেহজাবিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ধারণা করছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

মেহজাবিনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল তাঁর। বিশেষ করে বোন জান্নাতুলের সঙ্গে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলের সম্পর্ক রয়েছে বলে তাঁর সন্দেহ ছিল। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল তাঁর। এর জেরে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করেন। পরে মা, বাবা ও বোনের হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। তবে স্বামী ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে অচেতন করলেও হত্যা করেননি। গতকাল সকাল আটটার দিকে মেহজাবিন জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন।

ফোনে মেহজাবিন বলেন, ‘তিনজনকে খুন করেছি। এখনই পুলিশ পাঠান। যদি পুলিশ না আসে, তবে আরও দুজনকে খুন করব।’ এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

গতকাল হাসপাতালে শফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে কদমতলী এলাকায় বসবাস করেন তিনি। পেশায় তিনি মাংস বিক্রেতা। দুদিন আগে মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে আসেন। শুক্রবার রাতে মেহজাবিন তাঁকে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে আনেন। রাতে খাবারের পর তাঁকে ও মেয়েকে চা খেতে দিয়েছিলেন মেহজাবিন। তারপর তাঁর আর কিছু মনে নেই। তাঁর স্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যদের চা দিয়েছিলেন কি না, সেটা তিনি বলতে পারেননি। শফিকুল বলেন, তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির অন্যদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মনোমালিন্য ছিল। তবে কী নিয়ে মনোমালিন্য ছিল, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, মেহজাবিন আত্মস্বীকৃত খুনি। মা-বাবা ও বোনের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। স্বামীর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল না। বোনের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কের বিষয়টির নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।