করোনার দুর্দিনে 'পাশে আছি' বাঁচাল তাঁদের

নীলক্ষেতের ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতাদের বই কিনে বিক্রি করছে ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’। ছবি: সংগৃহীত
নীলক্ষেতের ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতাদের বই কিনে বিক্রি করছে ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’। ছবি: সংগৃহীত

দুই মাস ধরে সব বন্ধ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মালামাল বিক্রি নেই, আয় নেই। ধারদেনাই সম্বল। নীলক্ষেতের ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতারাও অসহায়। ব্যবসায় লালবাতি। এই দুঃসময়ে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি সংগঠন।

সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষকে সহায়তা দিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই কাজ করে আসছে সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কয়েকজন বন্ধু মিলে পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ সংগঠন গড়ে তোলেন। প্রান্তিক কমিউনিটিকে তাঁরা সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ক্রাউড ফান্ডিংই তাঁদের ফান্ডের মূল উৎস।

বৃহস্পতিবার পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের ফেসবুক পেজে নীলক্ষেতের বই বিক্রেতাদের নিয়ে একটি পোস্ট দেখা যায়। সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা তাহমিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নীলক্ষেতে আমাদের রেগুলার যাতায়াত। এদের কাছ থেকে বই কিনি। একদিন দেখলাম, পুরো মার্কেট বন্ধ কিন্তু একজন ফুটপাতে বই নিয়ে বসে আছেন। তখন মাথায় এল যে এই লোকগুলোর কী অবস্থা।’

তাহমিদ জানান, প্রথম দিনে তাঁরা ১৩০টি বই কিনেছেন, চার–পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়। বই কেনার আগ্রহ জানিয়ে অনেকে তাঁদের কাছে অনুরোধ করেছেন। তাহমিদরা আরও বই দোকানিদের থেকে কিনে নেবেন। তিনি বলেন, ‘নীলক্ষেতের ফুটপাতে যাঁরা বই বিক্রি করেন, তাঁরা তো কর্মহীন, টাকা নেই। তাঁদের বইগুলো যদি আমরা কিনি, তাহলে তাঁরা হাতে কিছু টাকা পাবেন। আর আমরা বিক্রি করতে পারলে যে বাড়তি টাকা আসবে, তা দিয়ে আরও অনেককে সাহায্য করতে পারব। প্রথম দিনে প্রায় ৫ জন বিক্রেতার থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকার বই কিনেছি।’

পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে এই বই কেনা যাবে। এতে ডেলিভারি চার্জসহ যেকোনো বইয়ের দাম পড়বে ২০০ টাকা।

নীলক্ষেতের ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতা মো. শাওনের সঙ্গে কথা হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আগে যে আয় হতো, তা দিয়ে খেয়েপরে চলে যেত। কিন্তু এই সময়টায় ধারদেনা করে চলতে হইছে। ওনারা এই বইগুলো কেনায় আমাদের অনেক উপকার হইছে। অন্তত ঘর ভাড়া, খাওয়ার টাকা তো পকেটে আসছে।’

৩১ মে অফিস, আদালত, গণপরিবহন সবই খুলে দেওয়া হচ্ছে। মার্কেট চালু হলেও শাওনের চিন্তা যায়নি। তিনি বলেন, যেহেতু তাঁরা ফুটপাতে বসেন, তাই চিন্তিত যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে দোকান বসাবেন। তাঁর চাওয়া—সরকার যেন তাঁদের কোনো ব্যবস্থা করে দেয়।