করোনার নমুনা সংগ্রহে ডিএনসিসিতে ৮ বুথ হবে: মেয়র আতিক

আতিকুল ইসলাম। ফাইল ছবি
আতিকুল ইসলাম। ফাইল ছবি

করোনা সংক্রমণের নমুনা সংগ্রহে চলতি সপ্তাহে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত আটটি স্থানে বুথ স্থাপন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এ বিষয়ে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানান ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এই বুথগুলোয় নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ল্যাবে পরীক্ষা করে ফলাফল জানানো হবে। পাশাপাশি ডিএনসিসির উদ্যোগে কোভিড–১৯–এর টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান আতিকুল ইসলাম।

আজ বুধবার দুপুরে ডিএনসিসির মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে আতিকুল ইসলাম এসব কথা জানান।

দায়িত্ব গ্রহণের পর চলমান করোনা মোকাবিলায় ডিএনসিসির গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানান আতিকুল ইসলাম। তিনি কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে ঢাকা উত্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসিকে করোনাভাইরাসমুক্ত রাখতে ১০টি ওয়াটার ব্রাউজারের সাহায্যে তরল জীবাণুনাশক বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক, ফুটপাত, লকডাউনকৃত এলাকা, হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের সামনে, উন্মুক্ত স্থানে ছিটানো হচ্ছে। এ ছাড়া সব ওয়ার্ডের গলিগুলোতে হস্তচালিত স্প্রের মাধ্যমে কর্মীরা জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে, রাস্তার পাশে, খোলা জায়গায় পথচারীদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখার কথা জানান আতিকুল ইসলাম।

ডিএনসিসির দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান আতিকুল ইসলাম। নাগরিকেরা প্রয়োজনে ডিএনসিসির হটলাইনে যোগাযোগ করে ত্রাণ সহযোগিতা চাইতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মেয়র ‘কিউ আর’ পদ্ধতি গ্রহণের কথা জানান। তিনি বলেন, যে বাসায় ত্রাণ পৌঁছানো হবে, এই কোডের মাধ্যমে তার তথ্য সিটি করপোরেশনে লিপিবদ্ধ থাকবে।

করোনার চিকিৎসায় অস্থায়ীভাবে করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ডিএনসিসির মহাখালীর মার্কেট ভবনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান আতিকুল ইসলাম। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনো এটি ব্যবহার শুরু করেনি। কিছুদিনের মধ্যে এর ব্যবহার শুরু হবে বলে জানান মেয়র।

করোনাকালে মাঠপর্যায়ে কাজ করা সংবাদকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ডিএনসিসির মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য যেতে পারবেন।

করোনা চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স, চালক, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, নিরাপত্তারক্ষীদের যাতে বাড়ির মালিকেরা হেনস্তা না করেন, মালিকদের প্রতি সে আহ্বান জানান মেয়র। কেউ হেনস্তার শিকার হলে ডিএনসিসির হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানানো কিংবা ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

অভিযোগ জানাতে ও করোনাকালে ত্রাণ সহযোগিতার জন্য নাগরিকেরা সরকারি হটলাইন ৩৩৩, ডিএনসিসির হটলাইন নম্বর ০৯৬০২২২২৩৩৩ এবং ০৯৬০২২২২৩৩৪–এ যোগাযোগ করতে পারবেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে ডিএনসিসির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান এবং কাঁচাবাজারের দোকান মালিক ও ক্রেতাদের বিশেষ গাইডলাইন মেনে চলার আহ্বান জানান মেয়র। ডিএনসিসির ১৬টি কাঁচাবাজার ইতিমধ্যে উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র সেসব বাজারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নাগরিকদের কেনাকাটা করার আহ্বান জানান।

ডিএনসিসির কর্মীদের প্রণোদনা
মহামারিকালীন জরুরি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবাণুনাশক ছিটানো, মশক নিধন কাজে নিয়োজিত ডিএনসিসির কর্মীদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। তারা যাতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজ করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে করপোরেশন।

এ সময় ডিএনসিসির যেসব কর্মী নগরবাসীর সেবায় কাজ করছেন, তাঁদের জন্য বিনা অর্থে স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করার কথা জানান মেয়র। তিনি বলেন, এই দুর্যোগে কোনো কর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে এই বিমার আওতায় আর্থিক সহযোগিতা পাবেন।

ডিএনসিসির নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনার চিকিৎসা–সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে মেয়র জানান।

করোনা দুর্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তায় ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় তিন লাখ দুস্থ পরিবারের কাছে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা ত্রাণ বিতরণ করেছেন বলে জানান মেয়র। পাশাপাশি মেয়রের নিজ উদ্যোগে পরিবার, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ৫০ হাজারের বেশি দুস্থ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন বলে জানান আতিকুল ইসলাম।