করোনায় বেড়েছে ব্যয়

পাঁচ বছর বয়সী আরাফাতের ৮ মাস আগে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। সেই থেকে সে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

চিকিৎসা

মায়েদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। ক্যানসারে আক্রান্ত সন্তান নিয়ে তাঁদের যুদ্ধ। তার ওপর করোনার আঘাত। তাঁদের একজন আতিকুলের মা তাসলিমা কথা বলতে বলতে কেঁদে দেন। চার মাস আগে সাত বছর বয়সী আতিকুলের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। তিন মাস আগে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মাঝেই মাসখানেক আগে তার করোনা শনাক্ত হয়।

শুধু আতিকুল নয়, ঢাকা শিশু হাসপাতালে গত মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন করার সময় ১৩ করোনা আক্রান্ত শিশু ভর্তি ছিল। এদের মধ্যে ছয় শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত। একজন বাদে অন্যরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ হাসপাতালে গত বছরের জুলাই থেকে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫৬টি করোনা আক্রান্ত শিশু আসে। এর মধ্যে মারা গেছে ১১ জন।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের করোনা নেগেটিভ হতে সময় লাগে।
অধ্যাপক মো. সেলিমুজ্জামান, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলোজি বিভাগের প্রধান, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

ক্যানসার আক্রান্ত কয়েক শিশুর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নতর। যেমনটির ধারণা পাওয়া যায় আতিকুলের ইটভাটার শ্রমিক ভাই তরিকুল ইসলামের কথা থেকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আতিকুলের জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টাকার ওষুধ কেনা লাগে। এর সঙ্গে তাঁদের খাওয়ার খরচ। এত দিন আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু এখন সে পথও বন্ধ হতে চলেছে। সাতক্ষীরার বাসিন্দা তরিকুলদের বাবা গাছ কাটার শ্রমিক।

ওই দিন হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে যেতেই আরেক শিশু আরাফাতের মা ও বোন সাহায্যের জন্য আকুতি জানান। পাঁচ বছর বয়সী আরাফাতের ৮ মাস আগে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। সেই থেকে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মাঝে তার করোনাও হয়। ওর বোন সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইটা কাহিল হয়ে গেছে। কেমো দিতে হয়। আবার এই নিয়ে তিনবার করোনার পরীক্ষা করাচ্ছি। বারবার পজিটিভ আসে। মাও ওর সঙ্গে থেকে পজিটিভ হয়েছেন।’ আতিকুলের মাও জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলেরও করোনা নেগেটিভ আসছে না।

আরাফাতের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে সুমাইয়ার ভাষ্য, ক্যানসার ওয়ার্ডে তার পাশের বেডের একজনের পজিটিভ ধরা পড়লে সবার পরীক্ষা করা হয়। তখন আরাফাতেরও করোনা ধরা পড়ে। সুমাইয়া জানান, তাঁর ভাইয়ের চিকিৎসায় প্রায় আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাবা একটি ব্যাংকের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তিন ভাইবোনের সংসার তাঁদের। পরিবারটি এখন প্রায় নিঃস্ব। তাই এখন অন্যের সাহায্যপ্রার্থী তাঁরা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান মীর ইউসুফ পাভেল বলেন, এ হাসপাতালের করোনার চিকিৎসার জন্য ২০টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে এখন (মঙ্গলবার) ১৩টিতে রোগী রয়েছে। অথচ ৩ সপ্তাহ আগেও ১ জন রোগী ছিল। তিনি বলেন, বাইরে থেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আসা শিশুর সংখ্যা কম। বেশির ভাগই বিভিন্ন রোগ নিয়ে আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল।

হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই করোনা সংক্রমণের বিষয়ে মীর ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বড়দের থেকেই এটা ছড়িয়েছে। শুধু এই শিশুরাই না, এদের সঙ্গে থাকা মা বা অভিভাবকেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. সেলিমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের করোনা নেগেটিভ হতে সময় লাগে। এসব শিশুর ক্যানসারের চিকিৎসা সাময়িক বন্ধ থাকে। তিনি জানান, ক্যানসারের কোনো শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে মারা যায়নি। তিনি এসব শিশুর করোনা হওয়ার জন্য অভিভাবকদের দায়ী করেছেন। সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘তাঁরা (অভিভাবক) অসচেতন এবং কথা শুনতে চান না। তাঁরা গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এখানে–সেখানে যান।’