কলের সূত্র ধরে নিখোঁজ ভাই–বোনকে উদ্ধার

গ্লাস ভাঙার জের ধরে বকা খেয়ে ফরিদপুরের খালার বাড়ি থেকে ঢাকায় দাদার বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে এসেছিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মাহিয়া আক্তার ওরফে পিংকি (১৩) ও তার ছোট ভাই বিপ্লব ব্যাপারী (১০)। কিন্তু রাজধানীতে এসে তারা পথ হারিয়ে ফেলে।

২০ সেকেন্ডের একটি কলের সূত্র ধরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত সোমবার রাতে রাজধানীর ভাটারার এক রিকশাচালকের বাসা থেকে শিশুদের উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল্লাহেল বাকী। উদ্ধার করা দুই শিশুর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ১৬ মাস ধরে মাহিয়া ও বিপ্লবের মা জর্ডানে কাজ করছেন। মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকায় তারা ফরিদপুরে খালা ছালেহা বেগমের বাড়িতে থাকত। কিন্তু তারা খালার বাসায় পানি পান করার একটি গ্লাস ভেঙে ফেলে। এতে খালা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বকাঝকা করেন। পরে দুই ভাই–বোন খালার বাসা থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে বের হলেও তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় মেরাদিয়ায় দাদার বাড়িতে যাওয়া। কিন্তু ঢাকায় এসে তারা পথ হারিয়ে ফেলে এবং ভাটারায় বালুর মাঠসংলগ্ন এক রিকশাচালকের বাসায় ওঠে। গত সোমবার রাতে সিআইডি ওই বাসা থেকে তাদের উদ্ধার করে। মাহিয়া ও বিপ্লব ফরিদপুরে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু করোনায় তাদের মাদ্রাসা বন্ধ আছে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সিনিয়র এএসপি) আমিনুল হক। শিশুরা ফিরে না আসায় তাদের খালা ছালেহা বেগম গত ২১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। শিশুদের অপহরণ করে পাচার করা হতে পারে বলে শিশুদের বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ফরিদপুরের পুলিশ দুই ভাই-বোনকে উদ্ধার করতে না পারায় তারা তিন দিন আগে ঢাকায় সিআইডির সহযোগিতা চায়।

সিআইডি কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ‘তিন দিন আগে আমাদের কাছে যখন বিষয়টি আসে, তখন আমরা তদন্ত করা শুরু করি। এই দুই শিশু মেরাদিয়ায় এক ফোন-ফ্যাক্সের দোকান থেকে তাদের বাবাকে ফোন দিয়ে শুধু “আব্বু, আব্বু” বলছিল। কিন্তু বাবা পিকুল ব্যাপারী তাদের সন্তানদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। কলটির সময় ছিল ২০ সেকেন্ড। পিকুলের মুঠোফোনে অটো রেকর্ড হয় এই কথা। পরে সেই কলের সূত্র ধরে আমরা এই দুই শিশুকে খুঁজতে থাকি। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এক রিকশাচালকের কাছে শিশুরা কেঁদে কেটে বলে তাদের মা-বাবা নেই। পরে ওই রিকশাচালক তাদের নিয়ে যান।’

সিআইডির কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, রিকশাচালক শিশুদের কাছ থেকে তার বাবার নম্বর নিয়ে ফোন দিয়ে জানতে চান, ‘আপনার বাড়ি কি ফরিদপুর?’ এই বলে তিনি (রিকশাচালক) ফোন রেখে দেন এবং পরে সেই মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন। তবে রিকশাচালকের আরেকটি নম্বর সংগ্রহ করে তাতে ফোন দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ওই মুঠোফোনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শিশুদের উদ্ধার করা হয়। দুই শিশুকে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রিকশাচালক প্রথমে মানবিক কারণে শিশু দুটিকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু পরে তাঁর মনে হয়তো তাদের পাচার করার চিন্তা আসে। সে জন্য তিনি তাঁর একটি ফোন বন্ধ করে ফেলেন। রিকশাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিশুদের পাচার করার পরিকল্পনা ছিল রিকশাচালকের—এমন তথ্য পাওয়া গেলে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।