কাজে আসছে না, তবু ‘পুশ বাটন’

সড়ক পারাপারের জন্য বসানো হয়েছিল ‘পুশ বাটন সিগন্যাল’। বোতামে চাপ দিলে জ্বলবে সবুজ বাতি। তখন পারাপার হবেন পথচারীরা। কিন্তু অকেজো হয়ে পড়ছে যন্ত্রগুলো। ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায়
ছবি: আশরাফুল আলম

পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে নগরের তিনটি স্থানে ‘পুশ বাটন সিগন্যাল’ পদ্ধতি চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু সেগুলো কার্যত কোনো কাজে আসছে না। তারপরও নগরের আরও ২০টি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।

পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতিতে রাস্তা পারাপারে ইচ্ছুক কোনো পথচারী বোতাম চাপলে সময় গণনা শুরু হবে। নির্ধারিত সময় শেষে পথচারীদের জন্য সবুজ বাতি জ্বলবে, যানবাহনের চালকদের জন্য জ্বলবে লাল বাতি। আর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পথচারীরা ‘ভয়েস’ নির্দেশিকা শুনে সড়ক পার হতে পারবেন। এই পদ্ধতি পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল নামে পরিচিত।

২০১৯ সালের অক্টোবরে পরীক্ষামূলকভাবে মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড স্কুল ও মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এই সংকেত পদ্ধতি চালু করা হয়। ডিএনসিসি ও স্থানীয় সূত্র বলছে, স্থাপনের কিছুদিন পরই এতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। কিছুদিন পরেই কার্যত তা অচল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সম্প্রতি মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে আরেকটি পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি চালু করেছে ডিএনসিসি।

প্রথম দুটি প্রকল্প ছিল পরীক্ষামূলক। ব্যবহার করে সমস্যা চিহ্নিত করে পরেরগুলোতে তা সমাধান করা হবে। এ জন্য সব কটি একসঙ্গে না করে ধীরে ধীরে করা হচ্ছে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম
মো. আতিকুল ইসলাম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দুটি প্রকল্প ছিল পরীক্ষামূলক। ব্যবহার করে সমস্যা চিহ্নিত করে পরেরগুলোতে তা সমাধান করা হবে। এ জন্য সব কটি একসঙ্গে না করে ধীরে ধীরে করা হচ্ছে।

ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল (টিইসি) সূত্র জানায়, নতুন করে নগরের আরও ২০টি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা আছে। এতে ব্যয় হবে দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিনটি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, কুড়িল চৌরাস্তা, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে ও প্রগতি সরণিতে গুলশান কমার্স কলেজের সামনে পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি চালুর জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।

আগেরগুলো কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পরও কেন নতুন করে বসানো হচ্ছে?—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ বলেন, ‘কোনো ভুল থাকলে, ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ভালো কিছু করব। কাজ হচ্ছে না, মানুষ মানছে না বলে যদি কাজ না করে থাকি, দেশ যদি না এগোয়, তাহলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষ আস্তে আস্তে সচেতন হবে, রপ্ত করবে।

যেমন চলছে

৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯৪ টাকা ব্যয়ে মোহাম্মদপুরের পুশ বাটন সংকেত ব্যবস্থা উদ্বোধনের সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, সংকেত না মেনে কোনো গাড়ি চললে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সম্প্রতি মহাখালী, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে গিয়ে এ রকম কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মোহাম্মদপুরে অনেক পথচারী সংকেত বোতাম চাপছেন। কিন্তু বাতি জ্বলছে না। সংকেত আসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। পথচারীরা চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে হাত উঁচিয়ে রাস্তা পারাপার করছে। আর ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৪ টাকা খরচ করে মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসানো পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি অচল। সংকেতবাতি ভেঙে ঝুলে আছে। পথচারীরা যে যার মতো রাস্তা পার হচ্ছে, আর গাড়িচালকেরা গাড়ি চালাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। সংকেতের অকেজো বাটন চেপে বিভ্রান্ত হচ্ছে অনেকে।

প্রথম দুটি পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি স্থাপন করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, বাজেট স্বল্পতার কারণে এতে দেশীয় কন্ট্রোলার দেওয়া হয়। এতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে আবার নতুন করে জাপানের কন্ট্রোলার বসানো হবে। এতে একেকটির জন্য ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা করে খরচ হবে।

৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে বসানো পুশ বাটন সংকেতব্যবস্থায় কিছুটা বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এখানে খুঁটিতে সংকেতবাতির পাশাপাশি সড়কেও বাতি বসানো হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে বোতাম কাজ করছে না। বাতি জ্বলছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। অন্যদিকে পথচারীরা সড়ক পার হচ্ছে নিজেদের ইচ্ছেমতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এসব সমস্যার বিষয়ে তিনি জানতেন না। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন।