কারওয়ান বাজারে সবজি আছে, ক্রেতা নেই

ক্রেতাশূন্য কারওয়ান বাজারের সবজির বাজার। ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
ক্রেতাশূন্য কারওয়ান বাজারের সবজির বাজার। ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত বুধবার মো. বোরহানউদ্দিন সবজি বিক্রি করেছিলেন ১৫ হাজার টাকার। আজ শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত সবজি বিক্রি করে তাঁর ১ হাজার ২০০ টাকাও আয় হয়নি। সবজির দাম জিজ্ঞেস করতেই বোরহানউদ্দিন বলেন, সবকিছুর দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কমছে।

ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান কাঁচা মালের আড়ত কারওয়ান বাজার এখন ক্রেতাশূন্য। এ কারণেই এখানে সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেকে কমে গেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সাত দিন ধরেই সাধারণ মানুষের চলাচল কমতে থাকে। একই সঙ্গে যান চলাচল কমে যায়। কিন্তু কারওয়ান বাজারের চেহারা ছিল ভিন্ন। ক্রেতাসমাগমে মুখর ছিল দিনরাত। গাড়ি ভর্তি করে কেনাকাটা করেছেন তাঁরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে যায় লাফিয়ে লাফিয়ে। ১০ দিনের ছুটির কারণে ঢাকা ছেড়েছে বহু মানুষ। গতকাল ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এ ছুটি ঘোষণা করা হয় গত ২৩ মার্চ। সেদিন থেকেই মানুষের ঢল নামে বাস টার্মিনাল, নৌবন্দর, রেলস্টেশনে। সবাই গ্রামে ছোটে। সরকারকে সহায়তা দিতে গতকাল ২৫ মার্চ থেকে মাঠে কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি সেবার দোকানপাট ছাড়া সব বন্ধ।

ক্রেতার অপেক্ষায় এক শুঁটকি বিক্রেতা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
ক্রেতার অপেক্ষায় এক শুঁটকি বিক্রেতা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

অন্যদিকে যাঁরা বিশাল শহরে রয়েছেন, তাঁরাও ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। ঘরে থাকলেও বেশির ভাগই আগাম কেনাকাটা করে রেখেছেন। সব মিলিয়ে তাই ক্রেতা কম, বেচাকেনাও কম। কিন্তু প্রতিদিন ঢাকায় সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে। বিক্রেতারা যথেষ্ট মালামাল নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা খুব একটা পাচ্ছেন না। সবজি বিক্রেতা বোরহানউদ্দিন তাঁর পাশে বস্তায় বস্তায় পড়ে থাকা বেগুন দেখিয়ে বলেন, ‘এগুলার পচা ছাড়া আর উপায় নাই।’

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেল, লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা ছিল ১০০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা ছিল ৭০ থেকে ৮০। ফুলকপি প্রতিটি ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ টাকা, যা ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, যা ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং কচুর লতি ৬০ টাকা, যা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

কদিন আগে হঠাৎ লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। তবে সেই লেবু আজ কারওয়ান বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ প্রচুর। কিন্তু ক্রেতা নেই।

মো. লোকমান নামের আরেক সবজি বিক্রেতা জানান, আজ দুপুর পর্যন্ত তিনি ১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। কিন্তু দুই দিন আগে তাঁর দম ফেলার ফুরসত ছিল না। কারওয়ান বাজারে বিক্রেতাও কম। অন্যরা জানান, ছুটির জন্য অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। লোকমান বলেন, ‘গাড়ি চললে আমি যাইতাম। এখন যদি আর এক দিনের জন্য গাড়ি চলে, বাকি মানুষও চইলা যাইব।’

ক্রেতা নেই তাই ঘুমিয়ে নিচ্ছেন এক পেঁয়াজ বিক্রেতা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
ক্রেতা নেই তাই ঘুমিয়ে নিচ্ছেন এক পেঁয়াজ বিক্রেতা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

পরীবানু একটা প্লাস্টিক বিছিয়ে তার ওপর কিছু মুলা, বেগুন, পটোল, পেঁপে নিয়ে বসেছেন। তাঁর ক্রেতা মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অনেকেই ঢাকা ছেড়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেচি। আজকে এক টাকাও বেচতে পারি নাই। এই অবস্থা চলতে থাকলে না খায়া মরা লাগব।’

পরীবানুরা জানেন না কত দিনে গিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। দুই দিন আগেও কারওয়ান বাজার ছিল মানুষে ঠাসা। সে বাজারে এখন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কিছু ফলের ভ্যান, সবজির টুকরি ঘিরে অল্পবিস্তর মানুষ আসছে। বস্তায় বস্তায় সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা পড়ে আছে। যাত্রীর আশায় রিকশা ঘুরছে এদিক–সেদিক। এর মধ্যে কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে এসে বাজার করছেন। মালিবাগ থেকে মা-মেয়ে এসেছেন। মা ফাহিমা হক বলেন, ‘শুকনা খাবার কিনে রাখা যায়। কিন্তু সবজি তো মজুত করা যায় না। আর মানুষ যেভাবে কিনেছে, তাতে দাম বেড়েছিল। এখন সবকিছুর দাম পড়েছে, মানুষ কম। তাই স্বস্তিতে কিনতে পারছি।’