কালও রাজধানীতে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকবে

ঘরে চুলা জ্বলছে না। খাবারের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। আজ ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে
ছবি: সাইফুল ইসলাম

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় পুরো রাজধানীতে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। এ ছাড়া আমিনবাজার এলাকায় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাইপলাইনে ছিদ্র বা লিকেজ মেরামতে দেরি হওয়ায় কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ কম থাকতে পারে।

আজ বুধবার দুপুরে সব গ্রাহকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিতাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিতাসের আওতাধীন এলাকায় সামগ্রিক নেটওয়ার্কে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় ঢাকা শহরসহ সব এলাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে ও চাপে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকবে।

বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় রান্নাবান্না নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন অনেকে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসিন্দা রোজী শারমিন। গতকাল সকাল থেকেই গ্যাস ছিল না তাঁর বাসায়। রাত নয়টার পর গ্যাস এলেও চাপ কম ছিল। রোজী ভেবেছিলেন, আজ সকালে গ্যাস সরবরাহ ঠিক হবে। কিন্তু সকালেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় তিনি রান্না করতে পারেননি। ফলে শিশুসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, কল্যাণপুর, মিরপুর ১, গ্রিন রোড, কলাবাগান এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। আজও অনেক এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। রাজধানীর বড় একটি অংশে এখনো গ্যাস নেই। যেটুকু গ্যাস আসছে, তা দিয়ে রান্না করা যাচ্ছে না।

গ্যাসের চুলা

সাভারের আমিনবাজার এলাকায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গতকাল সকালে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর লিকেজ বা ছিদ্র শনাক্ত হয় ১২ ইঞ্চি পাইপলাইনে। তাই এটি বন্ধ রেখে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ১৬ ইঞ্চি পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এতে রাজধানীর বড় একটি অংশ এখনো গ্যাস পাচ্ছে না। যেটুকু পাচ্ছে, তা দিয়ে রান্না করা যাচ্ছে না।

তিতাসের দায়িত্বশীল তিন কর্মকর্তা জানান, ছিদ্র মেরামতের কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমিনবাজার থেকে ৫০০ মিটার সামনে সালেহপুর ব্রিজ এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বালু ফেলে পাইলিং করতে গিয়ে তিতাসের পাইপলাইন ছিদ্র করেছে। এখন এক্সকাভেটর দিয়ে বালু সরাতে গেলেই পানি চলে আসছে। তাই কাজ করা যাচ্ছে না। গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও কাজ করা যায়নি। এভাবে পানির নিচে কাজ করতে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে তিতাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বাসায় গ্যাস না পেলেই মানুষ এখানে ফোন করে অভিযোগ জানায়। দুদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ আসছে।

আরও পড়ুন

গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীবাসীর গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়বে। ঢাকার একদিকে পাইপলাইনে লিকেজ, অন্যদিকে সরবরাহ বন্ধ। সব মিলে বিপদে পড়ে গেছে তিতাস। কোনো আশা দেখাতে পারছেন না তাঁরা।

তিতাস গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, আমিনবাজারের সমস্যা নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু ওই পাইপলাইনের জন্য সরবরাহে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা ডেমরা, যাত্রাবাড়ী পয়েন্ট দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছেন না।
তিতাসকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই হঠাৎ দিনে ৩৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ কমে গেছে। ২৬ মার্চ সামিট আবার সরবরাহ শুরু করতে পারে।

তিতাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সওজের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। পাইপলাইনের দুই পাশে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে বাঁধ নির্মাণ করে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সওজ আজ কাজ শুরু করবে। এরপর পাইপলাইন মেরামতের কাজ শেষ করবে তিতাস।